ওয়ারেন বাফেটের উত্তরসূরি হিসেবে গ্রেগ অ্যাবেলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী বাফেট, যিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অ্যাবেল। এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বিনিয়োগের জগতে, একটি বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।
বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় ৯৪ বছর বয়সী বাফেট জানান, তিনি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সিইও পদ থেকে অবসর নিবেন এবং তার জায়গায় গ্রেগ অ্যাবেলকে দেখতে চান। বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার পর, অ্যাবেল ২০২৩ সাল থেকে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বাফেট অবশ্য কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকবেন।
এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ, ২০২১ সালের মে মাসেই বাফেট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে অ্যাবেল তার উত্তরসূরি হতে পারেন। বাফেটের মতে, অ্যাবেল একজন ‘দারুণ ব্যবস্থাপক’ এবং কোম্পানির জন্য ‘অমূল্য সম্পদ’।
৬২ বছর বয়সী গ্রেগ অ্যাবেল বর্তমানে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে এনার্জির চেয়ারম্যান ও সিইও এবং নন-ইনস্যুরেন্স কার্যক্রমের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কানাডার এডমন্টনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টা থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
অ্যাবেলের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল পরামর্শক সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সে। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে এই কোম্পানির অফিসে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি ক্যালএনার্জিতে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে ক্যালএনার্জি, মিডআমেরিকান এনার্জি হোল্ডিংসকে ৪ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। এরপর ডেভিড সোকলের অনুরোধে অ্যাবেল মিডআমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হন। ২০০০ সালে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, সোকল, অ্যাবেল এবং ওয়াল্টার স্কটের (বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সাবেক পরিচালক) একটি বিনিয়োগকারী দল মিডআমেরিকানকে কিনে নেয়।
বাফেটের সঙ্গে অ্যাবেলের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাফেট অ্যাবেলকে একজন ‘গর্বিত আলবার্টান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অ্যাবেল বোর্ডে তার কানাডিয়ান শিকড়ের কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন। বাফেট মনে করেন, অ্যাবেল ‘কৌতূহলী’ এবং ব্যবসার খুঁটিনাটি বুঝতে আগ্রহী।
বার্কshায়ারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রন ওলসন মনে করেন, অ্যাবেল এই দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সাল থেকে অ্যাবেল বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করছেন।
বার্কশায়ারের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান চার্লি মুঙ্গার অ্যাবেলকে একজন ‘অসাধারণ’ এবং ‘দারুণ শিক্ষণীয় মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অ্যাপলের সিইও টিম কুকও বাফেটের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ওয়ারেন বাফেটের মতো এমন মানুষ খুব কমই আছেন এবং তিনি গ্রেগ অ্যাবেলের হাতে বার্কশায়ারকে তুলে দিয়ে সঠিক কাজটিই করছেন।
বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। বাফেটের বিনিয়োগের কৌশল এবং তার দীর্ঘদিনের সাফল্যের কারণে, তার উত্তরসূরি হিসেবে অ্যাবেলের দিকে এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন