ক্যান্সার মুক্তি! অস্ত্রোপচার ছাড়াই সেরে উঠছেন রোগীরা, নতুন আশা

শিরোনাম: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত: অস্ত্রোপচার ছাড়াই ইমিউনোথেরাপিতে মিলছে আরোগ্য?

ক্যান্সার চিকিৎসার জগতে এক নতুন আশা জাগিয়েছে একটি যুগান্তকারী গবেষণা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডস্টারলিম্যাব’ নামক একটি ইমিউনোথেরাপি ওষুধ ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির মতো প্রচলিত চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই কিছু ক্যান্সার রোগীদের আরোগ্য লাভ সম্ভব হয়েছে।

বিশেষ করে যাদের টিউমারে ‘মিসম্যাচ রিপেয়ার-deficiency’ (dMMR) নামক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা বিশেষভাবে কার্যকর হচ্ছে।

এই গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের মধ্যে ছিলেন কেলি স্পিল। ২৮ বছর বয়সে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর অস্ত্রোপচার এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি।

কিন্তু নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি অস্ত্রোপচার এড়িয়ে সুস্থ হয়েছেন, শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তিনি আরও দুটি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন।

গবেষণায় ১১৭ জন ক্যান্সার রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিলেন উন্নত পর্যায়ের রেক্টাল ক্যান্সার এবং অন্যান্য কঠিন টিউমারের (যেমন- কোলন, গ্যাস্ট্রিক, ব্লাডার ও প্রোস্টেট) রোগী।

এদের প্রত্যেককেই ডস্টারলিম্যাব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এই চিকিৎসার মাধ্যমে ৮০ শতাংশ রোগীর অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়নি।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, dMMR বৈশিষ্ট্যযুক্ত রেক্টাল ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ টিউমার সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে, যা ক্যান্সার চিকিৎসার ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক, মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের চিকিৎসক ডাঃ লুইস ডিয়াজ বলেন, “আমরা দেখেছি, রেক্টাল ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর।

এমনকি কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পরও টিউমার ফিরে আসেনি, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে সাহায্য করেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই চিকিৎসা শুধু রেক্টাল ক্যান্সারের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোনো ধরণের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যদি টিউমারে ঐ নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য থাকে।”

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য ছিল। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ক্লান্তি, শরীরে র‍্যাশ বা ইনজেকশন স্থানে সামান্য চুলকানির মতো সমস্যা দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন- কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন এবং অস্ত্রোপচার রোগীদের জন্য বেশ কষ্টকর হতে পারে। অনেক সময় এই চিকিৎসাগুলো শরীরের উপর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার ছাড়াই ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হওয়ায় রোগীদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে।

তবে, এই চিকিৎসা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। যাদের টিউমারে dMMR বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেই এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

তাই ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর টিউমারের জেনেটিক পরীক্ষা করানোটা জরুরি। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা বুঝতে পারবেন, কোন ধরণের চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেশি।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ উইলিয়াম ডাহুট বলেন, “ক্যান্সার চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপির সাফল্য সত্যিই অসাধারণ।

এর মাধ্যমে আমরা রোগীদের শরীরে কম বিষাক্ততা এনে ক্যান্সার নির্মূল করতে পারছি।”

চিকিৎসকরা মনে করছেন, এই গবেষণা ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণা করে এই চিকিৎসার দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাগুলো যাচাই করা হবে।

বাংলাদেশেও ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

তাই, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। স্বাস্থ্যখাতে উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণা যুক্ত করে, আমরা ক্যান্সার রোগীদের জন্য আরও ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *