এলোন মাস্কের বিদায়: সরকারি পরিষেবা নিয়ে ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি!

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি পরিষেবা হ্রাসে ‘ডগ’ প্রকল্পের প্রভাব: খরচ কমাতে গিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মী ছাঁটাই এবং ব্যয় সংকোচনের বিতর্কিত এক প্রকল্পের ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে, সরকারি পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, সেবার মানে অবনতি, এবং কর্মীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব।

এই প্রকল্পের প্রধান ছিলেন ইলন মাস্ক, যিনি একসময় ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (Doge) বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্কের এই পদক্ষেপগুলো সরকারের কার্যকারিতা বাড়ানোর পরিবর্তে, জনসাধারণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের অধ্যাপক ডোনাল্ড ময়েনিহানের মতে, ‘ডগ’ সরকারি পরিষেবা উন্নত করার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বরং, কিছু ক্ষেত্রে সেবার মান আরও খারাপ হয়েছে।

মাস্ক অবশ্য দাবি করেছেন যে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। তবে বাজেট বিশেষজ্ঞরা এই হিসাবের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, মাস্ক প্রায়ই অতিরঞ্জিত এবং ভুল তথ্য দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফা-সর্বস্বতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মাস্ক সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এর ফলে সরকারি পরিষেবার মান বাড়ানোর পরিবর্তে, তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ভেটেরানস হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে বেশি সময় লাগছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস)-এ ফোন করলে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে, এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা অফিসেও লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইয়েল বাজেট ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক মার্থা গিমবেল বলেন, মাস্কের সরকার পরিষেবা উন্নত করার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তার ভাষায়, তারা ছিল ‘সরকারের কাটছাঁট বিভাগ’।

সরকারি পরিষেবা উন্নত করতে হলে সময় ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গিমবেল আরও বলেন, ডগের কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে আগামী মাসগুলোতে সরকারি পরিষেবা আরও খারাপ হবে।

অন্যদিকে, ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’-এর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্স স্টিয়ার মনে করেন, মাস্কের এই ধরনের পদক্ষেপের সঙ্গে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, মাস্ক এবং তার টেক-টিমের সদস্যরা সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কর্মী ছাঁটাই করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইও’র প্রেসিডেন্ট লিজ শুলার বলেন, ডগের এই কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে কর্মীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (NIOSH)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, যা অগ্নিনির্বাপকদের সরঞ্জাম সুরক্ষার জন্য গবেষণা করে।

সরকার যেখানে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি কমায়, সেখানে কর্মী ছাঁটাই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন গিমবেল। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য পরিদর্শকের সংখ্যা কমানো হলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ইলন মাস্ক যদিও ১ মে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ডগের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পরিষেবার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। তারা মনে করেন, জরুরি অবস্থার কথা বিবেচনা না করে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে জনসাধারণের জন্য আরও বেশি ক্ষতির কারণ হবে।

বর্তমানে, ১ মার্কিন ডলার = ১১০ টাকা (১১ জুন, ২০২৪)।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *