জার্মানিতে একটি চরম-ডানপন্থী দলের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের পদক্ষেপ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার বিষয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা, ফেডারেল অফিস ফর দ্য প্রোটেকশন অফ দ্য কনস্টিটিউশন (বিএফভি), সম্প্রতি ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি) নামক দলটিকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এর প্রতিবাদে এএফডি’র পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলটির অভিযোগ, এই পদক্ষেপ তাদের কোণঠাসা করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা।
তারা মনে করে, এর মাধ্যমে তাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আদালত।
অন্যদিকে, জার্মান সরকার তাদের এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। তারা বলছে, এএফডি’র বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদ এবং ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের অভিযোগের ভিত্তিতে, দেশের সংবিধান রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জার্মান সরকার মনে করে, চরম ডানপন্থার বিস্তার রোধ করা জরুরি।
জার্মান সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয় দেশই জার্মানির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ এক প্রকার স্বৈরাচারিতার সামিল। রাশিয়াও এই পদক্ষেপকে ইউরোপের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ‘বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জার্মান সরকার অবশ্য তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। তারা জানিয়েছে, দেশের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন রক্ষার স্বার্থে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, স্বাধীন আদালত এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়াও, তারা অতীতে ডানপন্থী চরমপন্থা থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং সেই কারণে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে তারা বদ্ধপরিকর।
জার্মানিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ জটিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) জয়লাভ করেছে এবং তারা মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি)-এর সাথে জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, এএফডি’র মতো চরমপন্থী দলগুলোর উত্থান কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, সেটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসপিডি’র পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা এএফডি’কে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জার্মানির এই পরিস্থিতি দেশটির গণতন্ত্রের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। একদিকে যেমন ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি চরমপন্থার বিস্তার রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা