ফেব্রুয়ারীর এক সকালে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ৬৩ বছর বয়সী সুজান রিফলের জীবন নতুন মোড় নেয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করার পর, তাঁর ফুসফুসে বাসা বাঁধা ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণে সহায়তা করে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের ফলে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুজান এখন সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
সুজানের চিকিৎসক, ডা. ড্যানিয়েল মিলার জানান, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে তিনি সুজানের সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন।
এই স্ক্যানে ফুসফুসের বাম পাশে একটি ছোট আকারের ক্ষত ধরা পড়ে। যদিও এটি ক্যান্সার নাও হতে পারতো, তবু ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে, ডা. মিলার এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন।
এই প্রযুক্তি রোগীর বয়স, ধূমপানের ইতিহাস এবং সিটি স্ক্যানের চিত্র বিশ্লেষণ করে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কতটুকু, তার একটি পূর্বাভাস দেয়। সুজানের ক্ষেত্রে, এই স্কোর ছিল ৮, যার মানে ক্যান্সারের সম্ভবনা ৬৪ শতাংশ।
ডা. মিলার আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি পিইটি স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই স্ক্যানে ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়লে, দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফুসফুসের আক্রান্ত অংশ এবং লিম্ফ নোড অপসারণ করা হয়। সৌভাগ্যবশত, ক্যান্সারটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ায়, সুজানকে পরবর্তীতে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মতো কঠিন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।
ফুসফুসের ক্যান্সার এখনো পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্যান্সার-মৃত্যুর প্রধান কারণ। সাধারণত, ফুসফুসের ক্যান্সার তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পরে, যেখানে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
কিন্তু এআই প্রযুক্তির সহায়তায়, আমরা দ্রুত রোগ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি, যা সুজানের জীবন বাঁচিয়েছে।”
সুজানের মতে, “ধূমপান ছাড়ার পর, আমি আমার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করি। আগে সামান্য হাঁটলেই হাঁপিয়ে উঠতাম, এখন আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় এবং প্রাণবন্ত।”
এই সাফল্যের গল্প বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যার প্রধান কারণ ধূমপান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এর পেছনে ধূমপান একটি বড় কারণ। তাই, সুজানের এই গল্প, আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান ত্যাগ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণে সহায়ক হতে পারে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্ক্রিনিং প্রোগ্রামগুলির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, আমরা ফুসফুসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে লড়াই করতে পারি।
সুজানের স্বামী এখনো ধূমপান করেন। তবে, সুজান আশা করেন, শীঘ্রই তিনি ধূমপান ত্যাগ করবেন। সুজানের এই অভিজ্ঞতা, আমাদের সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: পিপল