ভারতে বুদ্ধের পবিত্র ধ্বংসাবশেষ: নিলাম বন্ধ করতে তৎপর ভারত।
হংকংয়ে আসন্ন একটি নিলাম বন্ধ করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ভারত সরকার। নিলামে উঠতে যাওয়া প্রাচীন রত্নগুলি আসলে বুদ্ধের দেহাবশেষের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় এই নিলামকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের কনভেনশনের পরিপন্থী।
মন্ত্রনালয় অবিলম্বে এই নিলাম বন্ধের দাবি জানিয়েছে এবং রত্নগুলিকে ভারতে ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণ ও ধর্মীয় সম্মানের সঙ্গে রাখার কথা বলেছে।
জানা গেছে, নিলামটি আগামী ৭ মে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এবং এতে মূল্যবান রত্নগুলি প্রায় ১০০ মিলিয়ন হংকং ডলার (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার সমান) মূল্যে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিলামের আয়োজন করছে সোotheby’s হংকং। এই নিলামের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্ডিত ও সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের নেতারা সরব হয়েছেন।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, এই রত্নগুলি ১৯ শতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে উত্তরপ্রদেশের পિપ્રાવા অঞ্চলে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছিল। ব্রিটিশ ভূমি মালিক উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে-র খননকার্যের সময় এই রত্নগুলি পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান পাথর, যেমন – চুনি, প্রবাল, গারনেট, মুক্তা, স্ফটিক এবং সোনা দিয়ে তৈরি অলঙ্কারগুলি বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে একটি স্তূপের মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। অনুমান করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বুদ্ধের দেহাবশেষের পুনরায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় এইগুলি সেখানে রাখা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৮ সালের ‘ইন্ডিয়ান ট্রেজার ট্রোভ অ্যাক্ট’-এর অধীনে পেপ্পের কাছ থেকে এই রত্নগুলি সংগ্রহ করে নেয়। যদিও পেপ্পেকে এর কিছু অংশ নিজের কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বুদ্ধের সমাধিস্থলে পাওয়া এই মূল্যবান সামগ্রীগুলি কোনো ‘সাধারণ প্রদর্শনী’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। বরং, এগুলি হলো ‘পবিত্র ধ্বংসাবশেষ’, যা শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করা উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, নিলাম আয়োজকদের ভারতের সরকার ও বিশ্বজুড়ে থাকা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সেইসঙ্গে, উইলিয়াম পেপ্পের উত্তরাধিকারীদের কাছে থাকা সমস্ত নথিপত্র এবং অন্য কোনো ধ্বংসাবশেষ থাকলে, তা প্রকাশ করার জন্য বলা হয়েছে।
এই নির্দেশ না মানলে ভারতীয় এবং হংকংয়ের আদালতে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান