জেরুজালেমের শান্তি দূত: কার্ডিনাল পিয়েরবাত্তিস্টা পিজ্জাবালার জীবন ও কর্ম।
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মাঝে শান্তির বার্তা নিয়ে যিনি আলো ছড়াচ্ছেন, তিনি হলেন কার্ডিনাল পিয়েরবাত্তিস্টা পিজ্জাবালা। জেরুজালেমের লাতিন প্যাট্রিয়ার্ক হিসেবে পরিচিত এই ধর্মযাজক সম্প্রতি কার্ডিনাল পদে উন্নীত হয়েছেন।
তার জীবন, কর্ম এবং শান্তির প্রতি অবিচল আগ্রহের কারণে তিনি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর নতুন পোপ নির্বাচনের দৌড়ে তিনি কি কোনো সম্ভাবনা রাখেন?
ইতালির বারগামো শহরে জন্ম নেওয়া পিজ্জাবালা ২৫ বছর বয়সে জেরুজালেমে আসেন। এরপর বিগত ৩৫ বছর ধরে তিনি এই অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি এখানকার মানুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তাদের সমস্যার সঙ্গে পরিচিত। এই অঞ্চলের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তিনি শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের শুরু থেকে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কার্ডিনাল পিজ্জাবালার মানবিক দিকটি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। তিনি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
তার এই সাহসী পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, শান্তির জন্য ধর্মীয় নেতাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
কার্ডিনাল পিজ্জাবালা শুধু একজন ধর্মযাজক নন, তিনি একজন পণ্ডিতও। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মিশে যান, যা তাকে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে আরও বেশি শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে।
পোপ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে পিজ্জাবালার নাম আলোচনায় আসাটা অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে তার মানবিকতা, সাহস এবং শান্তির প্রতি অবিচল আগ্রহ তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, “ঈশ্বর আমাদের কাজের জন্য দায়ী নন। আমাদের নিজেদেরই নিজেদের মানবিকতার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
গাজায় যুদ্ধের সময় সেখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। সেখানকার মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি ব্যথিত হয়েছেন।
যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখেও তিনি আশা হারাননি। বরং, তিনি বিশ্বাস করেন, “আলো সব জায়গায় আছে। এই আলোই আমাকে আশা জোগায়।
কার্ডিনাল পিজ্জাবালার জীবন ও কর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। শান্তির জন্য কাজ করা, মানুষের প্রতি সহানুভূতি রাখা এবং সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা – এই গুণগুলো তাকে সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে।
তিনি প্রমাণ করেছেন, ধর্ম শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন