মরুভূমি আর সমুদ্রের মিলন: স্পেনের অজানা সৈকতে একাকী ভ্রমণ!

স্পেনের এক প্রান্ত, যেখানে মরুভূমি আর সমুদ্রের মিলন

ভূমধ্যসাগরের ধারে, স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে – কাবো দে গাটা-নিজারের জাতীয় উদ্যান। এখানে কোনো বড় শহর নেই, রাস্তাঘাটও তেমন চোখে পড়ে না।

দিগন্ত বিস্তৃত বালুকাময় উপকূল, মাঝে মাঝে কয়েকটি ছোট গ্রাম, যেন প্রকৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটকদের আনাগোনা কম, কোলাহল নেই, যেন এক অন্য জগৎ।

এই জায়গাটির আকর্ষণ হলো এর রুক্ষ সৌন্দর্য। একদিকে মরুভূমির উষ্ণতা, অন্যদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি।

মাঝে পাহাড় আর পাথুরে পথ, যা হেঁটে পেরোনো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই স্থানটি যেন এক আশ্রয়স্থল।

এই জাতীয় উদ্যানে পায়ে হেঁটে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। প্রায় ৬৪ কিলোমিটার পথ জুড়ে এই ভ্রমণের আকর্ষণ হলো এখানকার বিভিন্ন গ্রাম, সৈকত আর পাহাড়ের দৃশ্য।

পথে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে কিছু ছোট হোটেল আর দোকান খোলা থাকে, যা এই ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে।

ভ্রমণ শুরু করার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো ফ্যারো দে কাবো দে গাটা, এখানকার বাতিঘর। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে পাহাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা মনকে শান্তি এনে দেয়।

বুনো ফুল আর লতাগুল্মে ঘেরা পথ, আর সূর্যের আলোয় ঝলমল করতে থাকা সমুদ্র – এই দৃশ্যগুলো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

পথে দেখা মিলবে সান জোসে-র মতো ছোট শহরের, যেখানে পুরনো দিনের স্মৃতি আজও লেগে আছে। এককালে এখানে ‘দ্য ক্লাশ’ ব্যান্ডের জো স্ট্রামার বাস করতেন।

এই শহরটি ভ্রমণের পথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য উপযুক্ত।

এই অঞ্চলের প্রকৃতি রক্ষার জন্য এক নারীর অবদান অনস্বীকার্য। দোনিয়া পাকিটা নামের এই নারী, এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে সারা জীবন কাজ করে গেছেন।

তাঁর ত্যাগের কারণেই এই জায়গাটি আজ ইউনেস্কো-র অধীনে একটি সংরক্ষিত স্থান।

ভ্রমণের সময় কিছু পুরোনো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে, যা এক সময় জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া, এখানে একটি পুরনো সোনার খনিও রয়েছে, যা এখানকার ইতিহাসের সাক্ষী।

এখানে মানুষের আনাগোনা কম থাকার কারণে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করা যায়। তবে, পথে কালা দে সান পেদ্রো-তে একটি বিশেষ দৃশ্য চোখে পড়ে।

এখানে একটি পুরনো ‘হিप्पी কম্যুনিটি’ রয়েছে, যা ১৯৬০ সাল থেকে আজও টিকে আছে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক অন্যরকম সহাবস্থান দেখা যায়।

ভ্রমণের শেষে, যখন আপনি আওয়া আমার্গা-য় পৌঁছাবেন, তখন মনে হবে যেন এক অন্য জগৎ থেকে ফিরে এলেন। এই ভ্রমণের স্মৃতি সবসময় মনের গভীরে গেঁথে থাকবে।

যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং কোলাহলমুক্ত একটি অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য কাবো দে গাটা-নিজারের এই ভ্রমণ হতে পারে একটি অসাধারণ সুযোগ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *