“আমরা অসহায়”: দক্ষিণ সুদানে সংঘর্ষের শিকার পরিবারগুলোর কান্না

দক্ষিণ সুদানে সংঘাত: বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর দূর্দশা

দক্ষিণ সুদানে চলমান সংঘর্ষের কারণে সেখানকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সেখানকার উদ্বাস্তু নারী-পুরুষ ও শিশুদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

জঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া একটি পরিবারের প্রধান, নায়েদেন মেথের কথা ধরা যাক। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি যখন খাবার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আনতে গিয়েছিলেন, তখনই শুরু হয় বোমা ও গুলির শব্দ।

মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। নিজের সন্তানদের কথা ভেবে তিনি দ্রুত ঘরে ফিরেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন তার নয়টি সন্তানসহ পরিবারের আর কেউ নেই।

সবাই জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে শুধু জংলেই রাজ্যে এক লাখ ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।

বিদ্রোহীদের আক্রমণে শহরগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে এবং খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কলেরা মহামারীও দেখা দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো রোগীশূন্য হয়ে পড়ায় রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মেথের স্বামী ২০১৫ সালে নিহত হয়েছিলেন, যা সেই সময়কার গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে। তিনি বলেন, অতীতের সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে ফেরে।

বর্তমানে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। খাবার ও পানির অভাবে তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

পানাম এলাকার আরেক বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী ন্যানখোর আয়েলের পরিবারও একই পরিস্থিতির শিকার। তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে এবং বর্তমানে তারা চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন।

তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দক্ষিণ সুদানের প্রায় ৯৩ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু।

সংঘর্ষের কারণে ত্রাণকর্মীরা তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না, ফলে সেখানকার মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, সহিংসতার কারণে তারা খাদ্য সহায়তা পাঠাতে পারছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সেখানকার বাসিন্দারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর এই করুণ অবস্থা দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। সেখানকার বাসিন্দারা খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার অভাবে দিন কাটাচ্ছে।

মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো সেখানে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *