নতুন পোপ: বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিকদের আশা

নতুন পোপের প্রত্যাশা: বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিকদের ভাবনা।

ভ্যাটিকানে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এই প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, নতুন পোপের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা কী? তাঁদের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো কেমন?

এই বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বিভিন্ন দেশের কয়েকজন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের সেইসব ভাবনা তুলে ধরা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়া মাকুক। তিনি চান, নতুন পোপ যেন মানবতাবোধ ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস এই কাজটি ভালোভাবে করেছেন।

নাদিয়া আরও মনে করেন, নতুন পোপকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে—জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত—জীবন ধারণের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে হবে।

আর্জেন্টিনার সাংবাদিক আলিসির মেডিনা চান, নতুন পোপ যেন তরুণদের আরও কাছে টানেন। তাঁর মতে, বর্তমান সমাজে অনেক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে, তাই তিনি চান নতুন পোপ যেন তরুণদের ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে আসেন এবং তাঁদের পরিবার ও নীতি-আদর্শের কথা মনে করিয়ে দেন।

কেনিয়ার নাগরিক, সাত সন্তানের মা মার্সিলিন বুনোরো-র মতে, নতুন পোপ যেন সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হন। তিনি চান, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রতি ক্যাথলিক চার্চের দরজা খোলা থাকুক।

মার্সিলিনের মতে, আফ্রিকার আরও বেশি কার্ডিনালকে ভ্যাটিকানের নেতৃত্বে আনা উচিত, যাতে এই মহাদেশের মানুষজন নেতৃত্ব নির্বাচনে বেশি সুযোগ পায়।

অস্ট্রিয়ার শিক্ষক ক্রিস্টোফ রুডিঙ্গার মনে করেন, নতুন পোপের উদার মানসিকতা থাকতে হবে। তিনি যেন সবার কথা শোনেন, সেটা ক্যাথলিক হোক বা না হোক।

তিনি আরও চান, নারীদের চার্চে আরও বেশি ভূমিকা রাখা এবং অবিবাহিত পুরোহিত নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পোপ যেন মনোযোগ দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের বাসিন্দা বিয়াত্রিচ রাকোমা-র মতে, নতুন পোপ যেন পোপ ফ্রান্সিসের দেখানো পথ অনুসরণ করেন। তিনি চান, নতুন পোপ যেন সবার মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেন।

তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নতুন পোপ যেন কোনো জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গের বিভেদ না করে ঈশ্বরের মহিমা প্রচার করেন।

ইতালির নাগরিক কার্লো কানিগ্লিয়া মনে করেন, বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ক্যাথলিক চার্চকে সংস্কার করতে হবে। তিনি চান, নতুন পোপ যেন লিঙ্গ সমতা এবং সমকামীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেন।

তিনি আরও মনে করেন, নতুন পোপ ইউরোপের বাইরে থেকে আসা উচিত, যেমন এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে।

ফিলিপাইনের মারলেন ওনাল দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের মনোযোগের প্রশংসা করেন। তিনি চান, নতুন পোপ যেন গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং সমাজের সব বিষয়ে—দারিদ্র্য হোক বা এলজিবিটিকিউ ইস্যু—উদার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেন।

আর্জেন্টিনার প্রকৌশলী সান্টিয়াগো ডিস্ট্রা চান, নতুন পোপ যেন তাঁর পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের মতোই অন্তর্ভুক্তিমূলক হন। তিনি চান, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রতি চার্চের দরজা খোলা থাকুক।

লেবাননের মুদি ব্যবসায়ী বার্নার্ড আঙ্কা মনে করেন, নতুন পোপের কাজ হবে খ্রিস্টানদের চার্চের দিকে ফিরিয়ে আনা। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই স্মার্টফোনের কারণে চার্চ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা এপির এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ক্যাথলিকদের নতুন পোপকে নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

তাঁদের চাওয়া, নতুন পোপ যেন মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ঐক্যের বার্তা নিয়ে আসেন, যা বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *