ট্রাম্পের সিনেমা শুল্কের হুমকি: বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্পে কি প্রভাব ফেলবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশী চলচ্চিত্রগুলোর উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছে, যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, অন্যান্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র নির্মাণের ‘ক্ষমতা চুরি করছে’। তিনি এই যুক্তিতে শুল্ক আরোপের কথা বলছেন। তবে, বিস্তারিত কোনো তথ্য বা সময়সীমা এখনো জানানো হয়নি। হোয়াইট হাউসও নিশ্চিত করেছে যে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
যদি এই শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে চলচ্চিত্র নির্মাণের খরচের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সিনেমার বাজেট অনেক বেড়ে যাবে এবং নির্মাতারা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন। এটি অন্যান্য শিল্পের মতো চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্প অন্যান্য অনেক পণ্যের থেকে আলাদা, কারণ এর সঙ্গে মেধা সম্পদ (intellectual property – বৌদ্ধিক সম্পত্তি) জড়িত।
কিন্তু কেন ট্রাম্প এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাইছেন? ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোস্যাল’-এ (Truth Social) অভিযোগ করেছেন যে, অন্যান্য দেশগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা (incentives) দেয়ার মাধ্যমে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাঁর মতে, এর ফলে আমেরিকান চলচ্চিত্র শিল্প ‘দ্রুত মৃত্যুর দিকে’ যাচ্ছে।
আর্ন্তজাতিক বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে হলিউড (Hollywood) চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করে থাকে। ২০২৩ সালে আমেরিকান চলচ্চিত্রগুলো রপ্তানি করে ২২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে এবং ১৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (trade surplus) তৈরি করেছে। হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে হলিউডের সিনেমার ব্যবসার পরিমাণ মোট আয়ের ৭০ শতাংশের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন শুল্ক আরোপ হলে চলচ্চিত্রের নির্মাণ খরচ বাড়বে, যা বিশ্বজুড়ে সিনেমা নির্মাণের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে, হলিউডের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারাও ক্ষতির শিকার হবেন। অনেক সময় একটি সিনেমার শুটিং আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে করতে হয়, কারণ সেখানকার কর ছাড় (tax incentives) নির্মাণের খরচ কমাতে সাহায্য করে।
সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির আইন ও ব্যবসা বিভাগের শিক্ষক অ্যান কোপ্পুজা (Ann Koppuzha) মনে করেন, সিনেমা তৈরি একটি সেবার মতো, তাই এর ওপর শুল্ক আরোপ করা কঠিন। তাছাড়া, শুল্ক আরোপ করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ থিয়েট্রিক্যাল স্টেজ এমপ্লয়িজ (International Alliance of Theatrical Stage Employees – IATSE) -এর মতো শ্রমিক সংগঠনগুলো মনে করে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কারণে আমেরিকান চলচ্চিত্র শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তারা সরকারের কাছে এই শিল্পের সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে এই শুল্ক কার্যকর করা হবে? চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে ডিজিটাল পরিষেবা (digital services) অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন – শুটিং, সম্পাদনা (editing) এবং পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ।
যদি এই শুল্ক সফলভাবে আরোপ করা যায়, তবে এর প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। কিছু দেশে স্থানীয় চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করার জন্য সিনেমার স্ক্রিনে তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, হলিউডের চলচ্চিত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে, তা মেধা সম্পদের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এর ফলে, সঙ্গীত (music) সহ অন্যান্য সৃজনশীল শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য উপযুক্ত প্রণোদনা (incentives) তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা (international collaboration) বজায় রাখা জরুরি। কারণ, আধুনিক বিশ্বে গল্প বলার ধরন সীমান্ত পেরিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)