গাজায় ‘ক্ষুধা যুদ্ধ’: ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা বন্ধের ঘোষণা হামাসের

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান জোরদারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে হামাস জানিয়েছে, তারা কোনো প্রকার শান্তি আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয়। একইসাথে গাজায় ইসরায়েলের ‘ক্ষুধা যুদ্ধ’ বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি ইসরায়েলি নিরাপত্তা ক্যাবিনেট গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। ‘অপারেশন গিডিওন’স চারিওটস’ নামের এই অভিযানে গাজার অধিকাংশ বাসিন্দাকে স্থানান্তরিত করা এবং সেখানে ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতির বিস্তার ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। হামাসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বাসেম নাইম এ প্রসঙ্গে বলেন, গাজায় যখন ‘ক্ষুধা যুদ্ধ’ চলছে, তখন নতুন করে কোনো যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানে হয় না।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন জানিয়েছেন, এই অভিযানের অংশ হিসেবে গাজার অধিকাংশ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের শুরুতে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকে একাধিকবার তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।

কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এর আগে দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর পুনরায় আলোচনা শুরুর চেষ্টা করা হলেও, তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েল যদি হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করতে চায় এবং হামাস যদি গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হয়, তাহলে কোনো সমাধান আসার সম্ভাবনা কম।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই অভিযানের হুমকি, গাজা দখলের পরিকল্পনা এবং ব্যাপক হারে বাস্তুচ্যুতি ঘটানোর মাধ্যমে ইসরায়েল সম্ভবত হামাসের কাছ থেকে ছাড় আদায় করতে চাইছে। একইসঙ্গে নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের প্রতি ডানপন্থী সমর্থন ধরে রাখতে চাইছে।

এদিকে, হামাস গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরায়েলের নতুন কাঠামোকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেল’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং গাজার মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নয়েল বারোট ইসরায়েলের এই অভিযান পরিকল্পনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন, ইসরায়েল সরকার ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি ‘অগণিত বেসামরিক মানুষের জীবনহানি এবং গাজার আরও ধ্বংস ডেকে আনবে’।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বাড়ানোর পক্ষে নয়। মানবিক কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির অভাবে গাজা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন গাজার ‘ক্ষুধার্ত’ ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সহায়তা করবে। তিনি হামাসকে মানবিক সহায়তা বিতরণে বাধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর শেষ হওয়ার আগে এই অভিযান শুরু হবে না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *