জাতীয় চিত্রশালার প্রবেশপথে নতুনত্বের ছোঁয়া: বিতর্ক আর প্রত্যাশার গল্প।
লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ন্যাশনাল গ্যালারি। এই বিখ্যাত চিত্রশালার প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত “সেইন্সবারি উইং”-এর সংস্কার নিয়ে সম্প্রতি শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
মূল কাঠামো ঠিক রেখে কিভাবে দর্শকদের জন্য এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সেই উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে নতুন পদক্ষেপ। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন স্থপতি আনাবেল সেলডর্ফ।
এই সংস্কার প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ন্যাশনাল গ্যালারিতে আসা সকলের জন্য প্রবেশপথটিকে আরও সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলা। পুরনো নকশার কিছু জটিলতা দূর করে আলো ও উন্মুক্ত স্থান বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্যালারির বর্তমান পরিচালক গ্যাব্রিয়েল ফাইনালদির মতে, এই পরিবর্তনের ফলে ন্যাশনাল গ্যালারি সকলের কাছে আরও বেশি আপন হয়ে উঠবে, বিশেষ করে যারা আগে এখানে আসতে দ্বিধা বোধ করতেন।
তবে, এই সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। মূল নকশার স্থপতি, রবার্ট ভেনচুরি এবং ডেনিস স্কট ব্রাউনের ডিজাইনটি প্রথমে সমালোচিত হলেও, পরে অনেক দর্শকের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।
সেলডর্ফের আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা যখন প্রথম প্রকাশ করা হয়, তখন অনেকে এর বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, এই পরিবর্তনে মূল নকশার সৌন্দর্যহানি ঘটবে। এমনকি, এই সংস্কারকে “ধ্বংসাত্মক” বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।
১৯৯০-এর দশকে “সেইন্সবারি উইং”-এর মূল ডিজাইন তৈরি করেন রবার্ট ভেনচুরি এবং ডেনিস স্কট ব্রাউন। তাঁদের এই ডিজাইনটি ছিল উত্তর-আধুনিকতাবাদী স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ।
এই ডিজাইন তৈরীর সময় তাঁরা ক্লাসিক্যাল স্থাপত্যের উপাদান এবং আধুনিকতার মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু এই ডিজাইন নিয়েও বিতর্ক ছিল প্রচুর।
কেউ কেউ একে “রুচিহীন” আবার কেউ “অদ্ভুত” বলেও মন্তব্য করেছিলেন।
সেলডর্ফের সংস্কার পরিকল্পনায় মূল ভবনের কাঠামো প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, প্রবেশপথে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পুরনো কিছু স্তম্ভ সরিয়ে সেখানে আরও বেশি আলো এবং উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, দর্শকদের সুবিধার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। সংস্কারের পর এখন প্রবেশপথ আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও স্বাগত জানানোর মতো হয়েছে।
এই সংস্কার প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আনাবেল সেলডর্ফ জানিয়েছেন, তিনি মূল নকশাকে সম্মান জানিয়েই এই পরিবর্তনগুলো এনেছেন। তাঁর মতে, এই পরিবর্তনের ফলে “সেইন্সবারি উইং”-এর আসল সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে ফুটে উঠবে।
সংস্কারের ফলে গ্যালারির ভেতরের স্থান আরও বড় হয়েছে এবং দর্শকদের জন্য তা আরও বেশি আরামদায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন করে সাজানো হয়েছে অডিটোরিয়াম এবং ক্যাফেটেরিয়া।
সব মিলিয়ে, ন্যাশনাল গ্যালারির এই নতুন রূপ দর্শকদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়। আগামী ১০ই মে জনসাধারণের জন্য এটি পুনরায় খোলা হবে।
তথ্যসূত্র: The Guardian