সুদানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী পোর্ট সুদানে ড্রোন হামলার কারণে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার শহরটিতে হওয়া বোমা হামলায় দেশটির প্রধান জ্বালানি ডিপো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরেই এই হামলা চলছে, যার ফলে বিদেশি সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
পোর্ট সুদানে এর আগে তুলনামূলকভাবে শান্তি বিরাজ করছিল, কিন্তু গত এপ্রিল মাস থেকে সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সরকারের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও কূটনীতিকদের সদর দপ্তরও এই শহরে অবস্থিত। ফলে, এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের কেন্দ্র।
জানা গেছে, বন্দর এলাকার জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো দেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জ্বালানির অভাবে সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রান্নার গ্যাসের সরবরাহও কমে গেছে।
সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই হামলাগুলো মূলত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। এর আগে, মার্চ মাসে সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমসহ মধ্য সুদানের বেশিরভাগ এলাকা থেকে আরএসএফ-কে বিতাড়িত করে।
সামরিক কর্মকর্তাদের ধারণা, প্যারা মিলিটারি বাহিনী, র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-ই এসব হামলার জন্য দায়ী। যদিও তারা এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি।
রবিবার ড্রোন হামলা চালানো হয় সুদানের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে। সোমবার শহরের জ্বালানি ডিপোগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যেখানে সুদানের সামরিক প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বাসভবনের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ হোটেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সামরিক সূত্র আরও জানায়, আরএসএফ-এর প্রধান ঘাঁটি দারফুরের নিয়ালা বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী বিমান ও অস্ত্র ডিপো ধ্বংস করেছে।
এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্রতিবেশী মিশর ও সৌদি আরব। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সুদানের সেনাবাহিনী-সমর্থিত সরকার আরএসএফ-কে সমর্থন করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। যদিও ইউএই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সুদানে চলমান এই গৃহযুদ্ধের কারণে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে।
বর্তমানে, আরএসএফ-কে বিতাড়িত করার পর সেনাবাহিনী তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ড্রোন হামলার মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানছে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীও আরএসএফ-এর শক্ত ঘাঁটি দারফুর অঞ্চলে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে।
উভয় পক্ষই উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী আল-ফাশের এবং অন্যান্য অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন