আমেরিকা ছেড়ে ফ্রান্সে! স্বপ্নভঙ্গ নাকি নতুন শুরু?

ফরাসি জীবন: এক মার্কিন দম্পতির নতুন দিগন্তের পথে যাত্রা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোলোরাডোর বাসিন্দা জেনি ভারকাউটেরিন এবং তাঁর স্বামী ওয়ার্ড-এর একটি স্বপ্ন ছিল: কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছাকাছি, ফরাসি দেশে একটি শান্ত জীবন কাটানো।

তাঁরা দুজনেই ইউরোপের এই দেশটিকে ভালোবাসতেন।

তাঁদের এই স্বপ্ন কিভাবে সত্যি হলো, সেই গল্পই আজ আমরা জানবো।

জেনি, যিনি মূলত মিনেসোটার বাসিন্দা, জানান, ফ্রান্সে যাওয়ার মূল কারণ ছিল শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পাওয়া।

তিনি বলেন, “আমি সবসময়ই কাজের চাপে অস্থির থাকতাম।

ফ্রান্সে এসে মনে হতো, এখানকার মানুষগুলো কত শান্ত।

তাঁদের মনে হতো, এই বুঝি তাঁদের স্বপ্নের দেশ।

কিন্তু ফ্রান্সে যাওয়াটা সহজ ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাড়ি কেনার কথা ভাবলে তাঁরা বুঝতে পারেন, শহরের কাছাকাছি ভালো একটি বাড়ি কেনা তাঁদের জন্য বেশ কঠিন।

তখনই তাঁরা ইউরোপে যাওয়ার কথা আরও গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেন।

তাঁদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরও দুটি বড় কারণ ছিল।

প্রথমত, তাঁরা তাঁদের দুটি কুকুর, হবস এবং এথেনাকে সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয়ত, তাঁরা চেয়েছিলেন সমুদ্রপথে ভ্রমণ করতে।

যদিও এই কাজটি বেশ কঠিন ছিল।

“কুইন মেরি ২” নামের একটি বিশাল জাহাজ ছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে কুকুর-সহ ভ্রমণের অনুমতি দিত।

কিন্তু সেখানেও ছিল দুই বছরের অপেক্ষার পালা।

শেষমেশ, তাঁরা টিকিট কাটার সিদ্ধান্ত নিলেন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে, জেনি ও ওয়ার্ড তাঁদের কুকুর দুটিকে সঙ্গে নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে “কুইন মেরি ২”-এ চেপে বসেন।

সাত দিন পর তাঁরা যুক্তরাজ্যে পৌঁছান এবং সেখান থেকে ফ্রান্সে যান।

যেহেতু ওয়ার্ড একজন ইউরোপীয় নাগরিক ছিলেন, তাই জেনি “কার্তে দে সেজোর” নামক ফরাসি রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে ফ্রান্সে প্রবেশ করেন।

এরপর তাঁরা ফ্রান্সের অবার্তে এলাকায় একটি বাড়ি খোঁজা শুরু করেন।

জেনি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, আমাদের ব্যবসার লাভের টাকা এবং হলিডে হোম বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে সেখানে একটি বাড়ি কিনব।

সেই পরিকল্পনা মতো তাঁরা কাজ শুরু করেন।

কিন্তু সবকিছু এত সহজে হয়নি।

জেনি জানান, তিনি ভেবেছিলেন, ফ্রান্সের জীবন অনেক সহজ হবে।

কিন্তু বাস্তবে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

ভাষাগত সমস্যা তাঁদের জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

জেনি ফরাসি বলতে পারতেন না।

তাঁর স্বামী ওয়ার্ড ফরাসি বলতে পারতেন, তাই সবকিছু তিনিই অনুবাদ করতেন।

জেনি বলেন, “আমি চাইতাম, আমার চারপাশে কী ঘটছে, তা জানতে।

কিন্তু ভাষা না জানার কারণে আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না।

তাঁদের প্রথম কয়েক মাস ছিল একাকীত্বে ভরা এবং ভীতিকর।

ফ্রান্সের সংস্কৃতিও ছিল আমেরিকার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

বিশেষ করে, এখানকার মানুষজন রবিবার দোকানপাট বন্ধ রাখত, যা জেনির কাছে প্রথমে খুবই অপরিচিত লেগেছিল।

ধীরে ধীরে তাঁরা এই সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেন।

অবশেষে তাঁরা সেন্ট সেভারিন গ্রামে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ইউরো (সেই সময়ের হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা) দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন।

কিন্তু শীতকালে সেখানকার জীবন ছিল একেবারে অন্যরকম।

জেনি বলেন, “শীতকালে জায়গাটা তেমন জমজমাট থাকে না।

আমরা এক বছর সেখানে থাকার পর বুঝতে পারলাম, জায়গাটা আমাদের জন্য সঠিক নয়।

এরপর তাঁরা ব্যবসা করার কথা ভাবলেন।

তাঁরা সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে “লুজ-সাঁ-সোভার” নামের একটি গ্রামে যান।

ওয়ার্ড সেখানে এক পুরনো বাড়ি খুঁজে পান, যা তাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছিল।

জেনি বলেন, “আমরা দেখলাম, জায়গাটা অসাধারণ।

এখানে সারা বছরই ব্যবসা করার সুযোগ আছে।

তাঁরা একটি নির্মাণ বিশেষজ্ঞকে ডেকে বাড়িটি পরীক্ষা করান।

এরপর তাঁরা বাড়িটি কিনে সেখানে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেন।

ধীরে ধীরে তাঁরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে যান।

জেনি ফরাসি ভাষা শেখা শুরু করেন এবং একসময় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন।

তিনি বলেন, “ভাষা শেখার কারণে আমি ফরাসি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি।

তাঁদের জীবন নতুন মোড় নেয়।

বর্তমানে জেনি এবং ওয়ার্ড লুরদে বসবাস করেন।

সেখানে তাঁরা একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন।

জেনি এখন তাঁর নতুন শখ, মৃৎশিল্প নিয়ে ব্যস্ত।

এছাড়াও, তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সে পরিবেশ-বান্ধব বাগান করার পরিকল্পনা করছেন।

শুরুর দিকের কঠিন সময়গুলো পার হওয়ার পর, জেনি ও ওয়ার্ড এখন তাঁদের জীবন নিয়ে খুবই খুশি।

তাঁরা বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গর্বিত।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *