অ্যামাজনের নতুন রোবট: স্পর্শের ক্ষমতা, কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী?

শিরোনাম: স্পর্শের অনুভূতি সম্পন্ন অত্যাধুনিক রোবট বানাচ্ছে অ্যামাজন, বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানে প্রভাবের আশঙ্কা

বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বিক্রেতা অ্যামাজন তাদের গুদামগুলিতে জিনিসপত্র বাছাই ও প্রস্তুত করার ক্ষমতা বাড়াতে ‘স্পর্শের অনুভূতি’ সম্পন্ন একটি নতুন রোবট তৈরি করেছে। ‘ভলকান’ নামের এই রোবটটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে চালু করা হবে, যার মধ্যে সম্ভবত এমন কিছু অঞ্চলও রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিস্তৃত।

জার্মানির ডর্টমুন্ডে অনুষ্ঠিত ‘ডেলিভারিং দ্য ফিউচার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই খবর ঘোষণা করা হয়।

অ্যামাজনের রোবোটিক্স বিভাগের পরিচালক অ্যারন পার্নেস এই ভলকানকে “রোবোটিক্সের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক উল্লম্ফন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু বিশ্বকে দেখা নয়, বরং অনুভব করতেও সক্ষম।

এই রোবটটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে জিনিসপত্রের আকার ও আকৃতি বুঝতে পারবে এবং সেগুলিকে কিভাবে ধরলে ভালো হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

বর্তমানে অ্যামাজনের গুদামগুলিতে মানুষ জিনিসপত্র শেলফ থেকে তুলে নেয় এবং বাছাই করে। এই কাজে সাহায্য করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভলকান আসার ফলে, কর্মীদের আর উঁচু তাক থেকে জিনিস নামানোর জন্য মই ব্যবহার করতে হবে না।

তবে, এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে কর্মীদের চাকরি হারানোর সম্ভবনা বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা ক্রমবর্ধমান শ্রম খরচ কমাতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয়তার দিকে ঝুঁকছে।

গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নত এআই-এর কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের চাকরি চলে যেতে পারে।

অ্যামাজনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, রোবটগুলো মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে না, বরং তাদের কাজকে আরও সহজ ও নিরাপদ করবে।

অ্যামাজনের প্রধান প্রযুক্তিবিদ টাই ব্র্যাডি জানিয়েছেন, “মানুষ সবসময়ই এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে।

তাঁর মতে, রোবটগুলো মূলত “একঘেয়ে, একরৈখিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক” কাজগুলো করবে।

তবে, প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, স্বয়ংক্রিয়তার সম্পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয়, কারণ কর্মীদের সবসময়ই কার্যক্রমের মূল্যায়ন করতে হয় এবং সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করতে হয়।

ব্র্যাডি আরও যোগ করেন, মানুষ সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো, যেমন— ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য খুঁজে বের করতে পারে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনাক্ত করা কঠিন।

অ্যামাজন বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় প্যাকেজিং প্রযুক্তিতেও বিনিয়োগ করছে, যার ফলে বর্জ্য হ্রাস করা যাবে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনে ৭০টির বেশি এমন মেশিন বসানো হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে আরও অনেক মেশিন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই ঘোষণার পাশাপাশি, অ্যামাজন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘অ্যামাজন হল’ নামে একটি নতুন সাইট চালু করেছে, যেখানে স্বল্প মূল্যে অনেক পণ্য পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই খবর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অ্যামাজনের সরাসরি কার্যক্রম এখনো বাংলাদেশে নেই, তবে বিশ্বজুড়ে অটোমেশন-এর এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে, অটোমেশনের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়াটাও জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *