সন্তান চেয়ে ৫০% নিশ্চিত ছিলাম: মা হওয়ার দ্বিধা

শিরোনাম: মা হওয়ার দ্বিধা: এক নারীর দ্বিধাগ্রস্থ যাত্রা।

বইয়ের দোকানের আলো-আঁধারি বাথরুমে রক্তের দাগ দেখে স্তম্ভিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে এক গভীর উপলব্ধিতে পৌঁছেছিলেন, তিনি সন্তানের জন্ম দিতে চান। সেই সন্তানের মা হতে চান তিনি, পৃথিবীর আর কোনো কিছুর চেয়ে বেশি।

কিন্তু মা হওয়ার এই পথটা কি এতই সহজ?

জীবন সবসময় আমাদের ইচ্ছামতো চলে না। একটা সময়ে এসে তিনি জানতে পারেন, তিনি মা হতে চলেছেন। একদিকে যেমন অনাগত সন্তানের জন্য একরাশ আনন্দ, তেমনই আরেক দিকে গভীর উদ্বেগ। এই সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে?

তিনি কি পারবেন একজন ভালো মা হতে? অতীতের কিছু ঘটনা, কিছু দ্বিধা বারবার তাঁর মনে উঁকি দিচ্ছিল।

আসলে, মা হওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সবসময় এত সহজ ছিল না। একবার তিনি তাঁর থেরাপিস্টের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, “এই সন্তানের বিষয়টি আমাকে পাগল করে তুলছে।” উত্তরে থেরাপিস্ট জানতে চেয়েছিলেন, “১ থেকে ১০০ পর্যন্ত, আপনি কতখানি চান মা হতে?”

তিনি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিয়েছিলেন, “৫৫ শতাংশ।”

এই সামান্য বেশি চাওয়ার অনুভূতি নিয়েই তাঁর পথচলা শুরু হয়। তিনি ভালো করেই জানতেন, সমাজের চোখে একজন আদর্শ মায়ের সংজ্ঞা কী। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে, নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া একজন নারীই যেন যোগ্য মা।

কিন্তু তিনি কি পারবেন সেই বাঁধাধরা পথে হাঁটতে? পুরনো সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, স্বাধীনতা – এসব কিছুকে দূরে সরিয়ে তিনি কি পারবেন নতুন এই পরিচয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে?

আসলে, তিনি ভয় পেতেন। ভয় পেতেন তাঁর ভেতরের সেই নারীকে, যিনি হয়তো তাঁর সন্তানের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন না। বংশ পরম্পরায় চলে আসা কিছু ধারণা, কিছু ভুল বোঝাবুঝি যেন তাঁকে তাড়া করে ফিরছিল।

তিনি কি তাঁর পূর্বপুরুষদের মতোই ভুল করবেন? তাঁদের মতো তিনিও কি তাঁর সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন?

মনের মধ্যে চলতে থাকা এই দ্বিধা, এই ভয় নিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। একদিকে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে সমাজের চাপ আর নিজের ভেতরের দ্বিধা। অবশেষে, তিনি যখন জানতে পারলেন তিনি মা হতে চলেছেন, তখন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, অতীতের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত – সবকিছু মিলেমিশে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হলো।

তবে, এই যাত্রাপথে তিনি একা ছিলেন না। তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর ভালোবাসার মানুষ, যিনি সবসময় তাঁর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তাঁদের দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সব শঙ্কা দূর হতে শুরু করে।

আজ, তাঁর সন্তান বড় হয়েছে। সে ভালোবাসে বাবার সাথে বাগান করতে, মায়ের সাথে বই পড়তে। মা হওয়ার এই পথটা হয়তো সবসময় সহজ ছিল না, কিন্তু ভালোবাসার শক্তিতে সব বাধা পেরিয়ে আসা যায়, এই বিশ্বাসই হয়তো একজন নারীকে পরিপূর্ণ মা করে তোলে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *