ভ্যাটিকানে পোপ নির্বাচনের সময় সাদা ধোঁয়া ওঠা মানেই নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন, আর কালো ধোঁয়া দেখা গেলে বুঝতে হবে, এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা এই রীতি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর কাছে পোপ (পোপ – Pope) একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।
তাই পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে।
পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক হয়, যা ‘কনক্লেভ’ (কনক্লেভ – Conclave) নামে পরিচিত। এই কনক্লেভে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচন করা হয়।
গোপন ভোটের ফল জানানোর জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় ধোঁয়ার সংকেত। যদি দুই-তৃতীয়াংশ কার্ডিনাল কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে না পারেন, তবে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়।
এর অর্থ হলো, নতুন পোপ নির্বাচিত হননি। কিন্তু, যদি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহলে সাদা ধোঁয়া ওড়ানো হয়, যা নতুন পোপ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।
এই বিশেষ ধোঁয়ার সংকেত পাঠানোর পদ্ধতি কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসছে। জানা যায়, চতুর্দশ শতকে ব্যালট পেপার পোড়ানোর মাধ্যমে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার রীতি শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীতে, উনিশ শতকে কালো ধোঁয়ার ব্যবহারের প্রচলন হয়। আর সাদা ধোঁয়ার ব্যবহার শুরু হয় ১৯১৪ সাল থেকে।
শুরুর দিকে, ধোঁয়ার রং নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতো। অনেক সময় ধূসর রঙের ধোঁয়া বের হতো, যা দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হতেন।
এই সমস্যা সমাধানে ২০০৫ সাল থেকে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করে। এখন ব্যালট পোড়ানোর সাথে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়, যার ফলে ধোঁয়ার রং সহজে বোঝা যায়।
সাদা ধোঁয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরেট, ল্যাকটোজ ও রোজিন ব্যবহার করা হয়, আর কালো ধোঁয়ার জন্য পটাশিয়াম পারক্লোরেট, অ্যানথ্রাসিন ও সালফার ব্যবহার করা হয়।
২০০৫ সাল থেকে নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ঘণ্টা বাজিয়েও তা ঘোষণা করা হয়।
এই বিশেষ রীতিটি শুধু একটি প্রতীকী বিষয় নয়, বরং এটি ক্যাথলিক চার্চের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারে, নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন কিনা।
তথ্য সূত্র: People