যুক্তরাষ্ট্রে জৈব কৃষিতে আগ্রহ কমছে: বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিকতা
বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে, যেখানে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষিকাজের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, জৈব বা অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের দিকে মানুষের আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু সম্প্রতি সেই ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি বাজারেও চাহিদা কমছে, ফলে অনেক কৃষক জৈব চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কৃষকরা বলছেন, জৈব চাষের খরচ অনেক বেশি। এই পদ্ধতিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা যায় না, ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ে।
তাছাড়া, জৈব সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত কিছু নিয়মকানুন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। অনেক কৃষক মনে করেন, এই সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া তাঁদের ব্যবসার জন্য খুব একটা লাভজনক নয়।
উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্কের একটি দুগ্ধ খামারের মালিক জেরেমি ব্রাউন জানান, তাঁরা পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যেমন – গোবর ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়ানো, বিদ্যুতের মাধ্যমে খামারের বর্জ্য পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
কিন্তু জৈব সার্টিফিকেশন তাঁদের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কারণ, এতে দুধের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
তবে, সব কৃষক যে একমত, তা নয়। অনেকেই মনে করেন, জৈব পণ্যের চাহিদা এখনো রয়েছে এবং এটি ভালো দামেও বিক্রি হয়।
নিউইয়র্কের একটি হাইড্রোপনিক খামারের মালিক জন বোল্টন জানান, তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্যের জন্য জৈব সার্টিফিকেশন পেতে আগ্রহী। কারণ, এতে করে বাজারে তাঁদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং ভোক্তাদের মধ্যে আস্থাও তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জৈব চাষের ধারণাটি ভালো হলেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের অধ্যাপক ফ্র্যাঙ্ক মিটলহনারের মতে, বাজারে টিকে থাকতে হলে জৈব চাষের নিয়মকানুনগুলোতে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
তাহলে, বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য এই খবর কতটা প্রাসঙ্গিক? আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষিকাজের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
যদিও এখানে জৈব চাষ এখনো সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি, তবে এর সম্ভাবনা অনেক। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি, পরিবেশবান্ধব চাষের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ, বাজার চাহিদা এবং সরকারি নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমানে, বাংলাদেশের কৃষকরাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই, তাঁদের জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
এক্ষেত্রে, জৈব সার ব্যবহার, মিশ্র চাষ, এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানো যেতে পারে। সেইসঙ্গে, সরকারি সহযোগিতা ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
জৈব চাষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আমাদের দেশের কৃষকদের জন্য, টেকসই কৃষি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে, যেখানে পরিবেশ ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
তথ্য সূত্র: Associated Press