যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথের নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছেন। সংবাদ সংস্থা এপি-র সূত্রে খবর, সৌদি আরবে আসন্ন এক সফরে তিনি পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আরব উপসাগর’ রাখার ঘোষণা দিতে পারেন।
এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ইরান। তাদের মতে, এটি ইরানের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। পারস্য উপসাগর নামটি ইরানের ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
পশ্চিমা বিশ্বে একসময় পারস্য নামে পরিচিত এই দেশটির কাছে এই নামের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এই জলভাগ ‘আরব উপসাগর’ নামেই পরিচিত।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এই নামটি ব্যবহার করে আসছে, সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ‘পারস্য উপসাগর’ নামটি বেশি প্রচলিত। গুগল ম্যাপে বর্তমানে ‘পারস্য উপসাগর (আরব উপসাগর)’ এবং অ্যাপল ম্যাপে শুধু ‘পারস্য উপসাগর’ নাম ব্যবহার করা হয়।
ট্রাম্প এর আগেও এই ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে তিনি শুধু ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেননি, বরং ‘আরব উপসাগর’ ব্যবহারের মাধ্যমেও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছিলেন।
ইরানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছিলেন, “ট্রাম্পের বন্ধুত্ব যে কারো কাছে বিক্রি হতে পারে, তা সবাই জানত। এখন আমরা দেখছি, তার ভূগোলও বিক্রিযোগ্য।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ইরানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা ইরানের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ সকল ইরানবাসীর জন্য অপমানজনক।
আরাকচি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, “এমন কোনো পদক্ষেপের কোনো বৈধতা থাকবে না, বরং এর ফলস্বরূপ ইরানের সকল স্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে তিনি এপি-কে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতেও বাধা দিয়েছিলেন।
যদিও আদালতের রায়ে এপির এই ধরনের কার্যকলাপকে সমর্থন করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা কেবল একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের পরিচিতি পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জটিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, সেদিকে এখন নজর রাখা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এপি