বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ, এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দুই-তৃতীয়াংশ অবদান এই ধনী শ্রেণীর।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হওয়া চরম আবহাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে এই গবেষণাটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
জার্মানির ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি করেছেন এবং তাঁরা ধনী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার ধরন ও বিনিয়োগের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
গবেষণাপত্রটি ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নামক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান গবেষক সারা শোয়েনগার্ট জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে কার্বন হিসাবের পরিবর্তে জলবায়ুগত দায়বদ্ধতার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ১ শতাংশ ধনী মানুষ শতাব্দীর ভয়াবহ তাপপ্রবাহের জন্য বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ২৬ গুণ বেশি এবং আমাজনের বনভূমি অঞ্চলে দেখা দেওয়া খরা পরিস্থিতির জন্য ১৭ গুণ বেশি দায়ী।
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী, যারা বিশ্বের মোট কার্বন দূষণের প্রায় অর্ধেক ঘটায়, তাদের কারণে তাপপ্রবাহ ২ থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যদি পৃথিবীর দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের মতো সবাই কার্বন নিঃসরণ করত, তাহলে ১৯৯০ সালের পর থেকে সামান্যই তাপমাত্রা বাড়তো।
গবেষণার সহ-লেখক কার্ল-ফ্রিডরিখ শ্লিউসনারের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে এই বৈষম্য দূর করা জরুরি।
বিজ্ঞানীরা জীবনযাত্রার ধরন এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের চেয়ে আর্থিক বিনিয়োগের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলো, যেমন- আমাজন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ধনী ব্যক্তিদের এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি।
এই অঞ্চলগুলো ঐতিহাসিকভাবে কার্বন নিঃসরণে কম অবদান রাখলেও চরম আবহাওয়ার শিকার হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, ধনী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার ধরন এবং বিনিয়োগের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রভাবগুলো বাড়ছে। তাই, তাঁদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তাঁদের মতে, ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক কার্যকলাপ ও বিনিয়োগের ওপর নজরদারি করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যেতে পারে।
এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক উন্মোচন করেছে।
ধনী দেশগুলোর নাগরিকদের জীবনযাত্রার ধরন এবং বিনিয়োগের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে, যা বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং তীব্র গরমে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বিশ্বের ১ শতাংশ ধনী মানুষের সম্পদ ৪২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের চেয়ে অনেক বেশি।
তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধনী দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা