বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে কি বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি? বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী?
আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বেই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা। এর প্রভাব পড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেও। আটলান্টিক মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম সাধারণত ১লা জুন থেকে শুরু হয়ে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত চলে।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পরিবর্তন আসছে। অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ২০২৫ সালের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। বিভিন্ন পূর্বাভাসে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, মৌসুমের শুরুটা হতে পারে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে। বিশেষ করে ক্যারিবীয় সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
গত এক দশকে, অন্তত সাতবার ১লা জুনের আগেই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার। এই প্রবণতা বাড়তে থাকায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংস্থাগুলোও তাদের কার্যক্রমের সময় পরিবর্তন করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (National Hurricane Center) তাদের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস ১৫ই মে থেকে দেওয়া শুরু করেছে, যা আগে ১লা জুন থেকে দেওয়া হতো।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুম বেশ সক্রিয় হতে পারে। কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির (Colorado State University) আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, প্রায় ১৭টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।
এর প্রধান কারণ হলো আটলান্টিক মহাসাগর, ক্যারিবীয় সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জল আরও উষ্ণ হচ্ছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
উষ্ণ জল ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ায় এবং এর ফলে আরও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে। মে মাসের শুরুতেই এখানকার তাপমাত্রা জুন-জুলাই মাসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি অন্যান্য আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল থাকে, তাহলে যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে।
যদিও আটলান্টিক মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলে না, তবুও জলবায়ু পরিবর্তনের এই চিত্রটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বঙ্গোপসাগরের জলও উষ্ণ হচ্ছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
আমরা জানি, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা বাংলাদেশের জন্য একটি নিয়মিত দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা দুটোই বাড়ছে।
অতএব, আটলান্টিক মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের এই পরিবর্তনগুলো আমাদের সতর্ক করে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে তার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN