যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ, সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুদের হার কমানোর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ব্যাংকটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়াকে। ব্যাংকটি তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে রেখেছে, যা গত ডিসেম্বরের পর থেকে একই রয়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটি সুদের হার তিনবার কমিয়েছিল। ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সবাই একমত ছিল।
ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।” হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে চাপ থাকা সত্ত্বেও সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা এই মন্তব্য করে।
অর্থনীতিবিদ এবং ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো এই বছর আরও দুই থেকে তিনবার সুদের হার কমাবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কের কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের নীতিকে প্রভাবিত করছে।
ফেডারেল রিজার্ভের এমন মন্তব্য নজিরবিহীন যে, একইসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব দুটোই বাড়তে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কের কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই শুল্কের কারণে আমদানি করা যন্ত্রাংশ এবং প্রস্তুত পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। একইসঙ্গে, কোম্পানিগুলো তাদের খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করতে পারে, যার ফলে বেকারত্বও বাড়তে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি “একটি স্থিতিশীল গতিতে বাড়ছে”। প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদন হ্রাসের কারণ হিসেবে তারা রেকর্ড পরিমাণ আমদানিকে দায়ী করেছে, কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষ নতুন আমদানি শুল্কের আগেই পণ্য মজুত করতে চাইছে।
ফেডারেল রিজার্ভ আরও জানিয়েছে, তারা “সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।” তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে শ্রমবাজারের অবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ ও প্রত্যাশা, সেইসাথে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১২ মাসের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় মার্কিন অর্থনীতিতে ১ লাখ ৭৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এই হিসাব ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘোষণার আগের। এরপর থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। অন্যদিকে, এডিবি জবস রিপোর্টে দেখা গেছে, নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৬২ হাজার।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভালো অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনো একটি সুস্থ অর্থনীতির মধ্যে আছি, যদিও মানুষ এবং ব্যবসার মধ্যে কিছুটা হতাশাজনক মনোভাব দেখা যাচ্ছে।”
অর্থনীতি বিশ্লেষক ব্রায়ান জ্যাকবসেনের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের বিবৃতিটি ছিল সুস্পষ্ট। তারা প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিগুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। তাই, জুন মাসের বৈঠকের আগে পর্যন্ত তথ্য-উপাত্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে, তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে নাকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা