যুদ্ধ-উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের সাথে সিরিয়ার আলোচনা: বিস্ফোরক খবর!

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারায়া জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তার সরকার উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি এই কথা বলেন।

গত সপ্তাহে দামেস্কের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ৫০০ মিটারের মধ্যে ইসরায়েলি হামলা হয়।

আল-শারায়া আরও জানান, দুই পক্ষের মধ্যে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, যাতে উভয় পক্ষই নিয়ন্ত্রণ হারাতে না বসে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলের ‘অনিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপের’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েলকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও, ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই আলোচনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট আল-শারায়া প্যারিসে এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে যান। ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম কোনো ইউরোপীয় দেশ সফরে গেলেন তিনি।

এর আগে তিনি বিরোধী যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে বাশার আল- আসাদের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন।

জাতিসংঘের বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে এই সফর সম্ভব হয়। কারণ, সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’-এর (সাবেক আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট) নেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন আল-শারায়া।

প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর আল-শারায়া সিরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আগের সরকারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

জবাবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জানান, সিরিয়া যদি বর্তমান পথে চলতে থাকে, তাহলে ফ্রান্স ধীরে ধীরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এমনকি, এক্ষেত্রে তারা তাদের মার্কিন মিত্রদেরও একই পদক্ষেপ নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। তবে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত অন্যান্য ব্যবস্থা ১লা জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ার পুনর্গঠন করতে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

তাই তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন খাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা জরুরি।

ট্রাম্প প্রশাসন নতুন সিরীয় সরকারের প্রতি কিছুটা রক্ষণশীল মনোভাব দেখালেও, ইউরোপীয় দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়া থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তার মতে, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা জরুরি।

প্যারিস থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক নাতাশা বাটলার জানান, এর বিনিময়ে ম্যাক্রোঁ আশা করছেন, সিরিয়ার নতুন সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে এবং ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

বাটলার আরও যোগ করেন, ‘শারায়া পশ্চিমা মিত্রদের আশ্বস্ত করতে এসেছেন, যারা কিছুটা সন্দিহান এবং নতুন নেতৃত্বের গতিপথ দেখতে আগ্রহী।’

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *