অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পারকিনসন’স রোগের মধ্যে সম্পর্ক, নতুন গবেষণায় উদ্বেগ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultraprocessed food) গ্রহণ করলে পারকিনসন’স রোগের (Parkinson’s disease) প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
গবেষণাটি বলছে, যারা বেশি পরিমাণে এই ধরনের খাবার খান, তাদের মধ্যে রোগটির প্রাথমিক কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। খাদ্য ও জীবনযাত্রার সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কযুক্ত হওয়ায়, এই গবেষণাটি বাংলাদেশের মানুষের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪৩,০০০ জনের স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি গবেষণার (প্রায় ২৬ বছর) ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে পারকিনসন’স রোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি।
গবেষণায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ পরিবেশন (serving) প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণকারীদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা গেছে, যেখানে কম পরিমাণে (প্রায় ৩ পরিবেশন) গ্রহণকারীদের তুলনায় এর সম্ভাবনা আড়াইগুণ বেশি ছিল।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ছিল—শরীরে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিষণ্ণতার লক্ষণ, গন্ধ বা রঙের পরিবর্তন এবং দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম। এই উপসর্গগুলো পারকিনসন’স রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দিতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ধরনের খাবারে প্রায়ই খাদ্যগুণ কম থাকে, যেমন—ফাইবার, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব থাকে। বরং এতে যোগ করা হয় চিনি, লবণ ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
উদাহরণস্বরূপ, বাজারে সহজলভ্য চিপস, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত নুডলস, এবং বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশেও বর্তমানে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা পারকিনসন’স রোগ সরাসরি প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে হয়—এমনটা প্রমাণ করে না। তবে, রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।
তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, যেমন—শাকসবজি, ফল এবং শস্য জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. অরিন্দম সেনগুপ্ত এই বিষয়ে বলেন, “খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পারকিনসন’স রোগের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।”
গবেষণায় যদিও পারকিনসন’স রোগ প্রতিরোধের সরাসরি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই গবেষণার ফল থেকে বোঝা যায়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রয়োজন। খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন