গোপন ৫টি ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন অঞ্চল: যেখানে এখনো ভিড় নেই!

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, যারা একটু অন্যরকম ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন অঞ্চলগুলো হতে পারে দারুণ গন্তব্য। নাপা ভ্যালির মতো পরিচিত অঞ্চলের বাইরেও এখানে রয়েছে এমন কিছু জায়গা, যেখানে পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম, আর স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগও অনেক বেশি।

আসুন, তেমনই পাঁচটি অজানা ওয়াইন অঞ্চলের গল্প শোনা যাক।

১. লোদি: আঙুর চাষের এক প্রাণকেন্দ্র

ক্যালিফোর্নিয়ার লোদি শহরটি সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের প্রায় ৯০ মাইল পূর্বে অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

এই অঞ্চলের খ্যাতি মূলত ‘ফ্লেম টোকাই’ নামক এক প্রকার আঙুর থেকে, যা একসময় খাবার হিসেবে খুব জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীতে যখন বাজারে বীজহীন আঙুরের চাহিদা বাড়ে, তখন এই অঞ্চলের অনেক কৃষকই তাদের ‘ফ্লেম টোকাই’-এর বাগান সরিয়ে সেখানে ওয়াইন তৈরির উপযোগী আঙুর চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে, লোদি ক্যালিফোর্নিয়ার মোট ওয়াইন তৈরির প্রায় ২০ শতাংশ আঙুর সরবরাহ করে, যা নাপা ও সোনোমা অঞ্চলের মিলিত উৎপাদনের থেকেও বেশি।

লোদির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে আকর্ষণীয় ‘লোদি আর্চ’। এছাড়া, শহরের দেয়ালে চোখে পড়ে নানান রঙের সুন্দর চিত্রকর্ম, যা এখানকার সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে।

এখানে আসলে, আপনি বিনামূল্যে শহরের ইতিহাস বিষয়ক একটি ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন। ওয়াইনপ্রেমীরা ‘লোদি ওয়াইন ট্রলি’-তে চড়ে এখানকার বিভিন্ন ওয়াইনারি ঘুরে দেখতে পারেন, যেখানে ‘ওল্ড ভাইন জinfandel’-এর মতো বিশেষ ওয়াইন তৈরি হয়।

এছাড়া, ‘ক্যালাভাইনস ওয়াইনারি অ্যান্ড অলিভ মিল’-এর মতো জায়গাগুলোতে ওয়াইন ও জলপাই তেলের স্বাদ নেওয়ারও সুযোগ আছে।

২. লিভারমোর ভ্যালি: ঐতিহ্যের সাথে পরিবেশ সচেতনতা

সান ফ্রান্সিসকো থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ পেরোলেই লিভারমোর ভ্যালি। এটি আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন ওয়াইন অঞ্চল, যেখানে ১৮৮৩ সালে প্রথম বাণিজ্যিক ওয়াইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই অঞ্চলের বিশেষত্ব হলো, এখানে অনেক নারী ওয়াইনারি মালিক ও ওয়াইন প্রস্তুতকারক রয়েছেন। এখানকার ওয়াইন টেস্টিংয়ের খরচও নাপার তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী।

লিভারমোর ভ্যালি পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেয়। এখানকার চাষিরা কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা বন্ধ করেছেন, সেচের জন্য ড্রিপ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, এমনকি ঘাস কাটার জন্য ট্রাক্টরের বদলে ভেড়া ব্যবহার করেন।

সম্প্রতি, এখানকার ওয়াইন প্রস্তুতকারকরা ‘সভিগনন ব্ল্যাঙ্ক’ এবং ‘ক্যাবারনেট ফ্রাঙ্ক’ -কে এই অঞ্চলের বিশেষ ওয়াইন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

৩. টেমাকুলা ভ্যালি: স্বকীয়তার স্বাদ

যারা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য টেমাকুলা ভ্যালি একটি দারুণ জায়গা। লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান দিয়েগোর মাঝামাঝি অবস্থিত এই অঞ্চলে সকালে ও রাতে বেশ ঠান্ডা থাকে, যা আঙুরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

এখানকার ওয়াইনারিগুলো তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সুপরিচিত। আপনি চাইলে ‘বোটাইয়া ওয়াইনারি’তে নিজের পছন্দের ওয়াইন তৈরি করতে পারেন।

এখানে উৎপাদিত ওয়াইনগুলির স্বাদ নেওয়ার জন্য আপনাকে সরাসরি ওয়াইনারিগুলোতে যেতে হবে। এখানকার ‘উইলসন ক্রিক ওয়াইনারি’র ২০১৯ সালের ‘ভিওনিয়ার’-এর যেমন খ্যাতি রয়েছে, তেমনই গ্রীষ্মকালে তাদের ‘আয়লমন্ড স্পার্কলিং ওয়াইন’-ও খুব জনপ্রিয়।

এখানকার আঙুর ক্ষেতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে, গরম হাওয়ার বেলুনে চড়ে আকাশ পথে ভ্রমণ করতে পারেন।

৪. সান্টা ইনেজ ভ্যালি: সিনেমার জগৎ থেকে প্রকৃতির কোলে

২০০৪ সালের সিনেমা ‘সাইডওয়েজ’-এর কথা মনে আছে? এই সিনেমার হাত ধরেই পরিচিতি পায় সান্টা ইনেজ ভ্যালি। ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল কোস্টের কাছে অবস্থিত এই অঞ্চলে পশ্চিমে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস ‘শার্দনে’ ও ‘পিনোট নয়ার’-এর মতো আঙুর চাষের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।

এখানকার শান্ত ও সুন্দর গ্রামগুলোতে ‘ফেস পার্কার’-এর মতো ওয়াইনারিগুলোতে অশ্বারোহণেও বের হওয়া যায়।

এখানে বেড়াতে এসে আপনি ডেনিশ শহর ‘সোলভাং’-এ যেতে পারেন। সেখানে ‘সোলভাং ট্রলি’-তে চড়ে ঘোরাঘুরি করা এবং ‘ওলসেনস ড্যানিশ ভিলেজ বেকারি’র তৈরি করা ড্যানিশ কুকি ও বাটার কুকির স্বাদ নেওয়াটা দারুণ অভিজ্ঞতা।

এছাড়াও, ‘ক্লেরমন্ট ফার্মস’-এ গেলে ল্যাভেন্ডার ক্ষেত ঘুরে দেখতে এবং ল্যাভেন্ডার দিয়ে তৈরি নানান পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে।

৫. সান্টা ক্রুজ পর্বতমালা: পাহাড় ও ওয়াইনের মেলবন্ধন

ক্যালিফোর্নিয়ার আরেকটি সুন্দর ওয়াইন অঞ্চল হলো সান্টা ক্রুজ পর্বতমালা। সমুদ্র ও বনের মাঝে প্রায় ৩০০ জন ক্ষুদ্র চাষি এখানে আঙুর উৎপাদন করেন।

এখানকার ওয়াইনারিগুলো সাধারণত পরিবার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং তাদের ওয়াইন সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়।

এখানে ছোট ছোট স্বাদ নেওয়ার ঘরগুলোয় অতিথিদের বিশেষভাবে আপ্যায়ন করা হয়। লস গ্যাটোসের ‘বারেল স্কুল ভিনিয়ার্ডস’-এ গিয়ে আঙুর ক্ষেতের দৃশ্য দেখতে দেখতে ‘শার্দনে’ অথবা ‘ক্যাবারনেট ফ্রাঙ্ক’-এর স্বাদ নিতে পারেন।

এছাড়া, ‘কুপার-গ্যারড ভিনিয়ার্ডস’-এর আঙিনায় লাইভ মিউজিকের সাথে ওয়াইন উপভোগ করারও সুযোগ রয়েছে।

যারা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা চান, তারা মন্টারে উপসাগরে ‘শার্দনে সেইলিং চার্টার্স’-এর সাথে ওয়াইন ক্রুজে অংশ নিতে পারেন।

এই ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন অঞ্চলগুলো শুধু ওয়াইনের স্বাদ নেওয়ার জায়গা নয়, বরং এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য, সংস্কৃতির ভিন্নতা ও কৃষি উদ্ভাবনের এক দারুণ উদাহরণ। যারা একটু অন্যরকম ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য এই জায়গাগুলো হতে পারে আদর্শ গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *