যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার ঘোষিত যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখান করেছে কিয়েভ। রাশিয়ার বিজয় দিবস উপলক্ষে মস্কোর পক্ষ থেকে একতরফাভাবে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, ইউক্রেন এটিকে ভ্লাদিমির পুতিনের ‘নাটক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এক নির্দেশনায় জানান, আগামী ৮ মে মধ্যরাত থেকে ১১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত ‘মানবিক বিবেচনা’র স্বার্থে ইউক্রেনে সকল সামরিক অভিযান স্থগিত করা হবে। তবে কিয়েভ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের এই ঘোষণাকে ‘নাটক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, রাশিয়া বরং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করুক।
রাশিয়ার বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের স্মরণে প্রতি বছর ৯ মে এই দিবসটি পালন করা হয়।
এই উপলক্ষে মস্কোতে একটি সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এরও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতি বছর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাশিয়া সরকার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য প্রচারণা চালায়। তারা এই আগ্রাসনকে কিয়েভের ‘নাৎসি’ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে চিত্রিত করে।
এদিকে, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় বিপর্যস্ত হয়েছে মস্কো। বুধবার ভোরে দ্বিতীয় দিনের মতো ড্রোন হামলায় মস্কোর ১৩টি বিমানবন্দর—যেখানে চারটি মস্কোর ভেতরে এবং নয়টি বাইরে—কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি এমন ছিল যে, রাশিয়ার কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হন।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরের দিকে মস্কোর দিকে আসা একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোর প্রতিনিধিরা যখন কুচকাওয়াজে যোগ দিতে আসছিলেন, তখন বিমানবন্দরের এই অচলাবস্থা মস্কোর জন্য বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো ল্যাম এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোসহ আরও অনেকে।
ইউক্রেন এর আগে জানিয়েছিল, তারা রাশিয়ান ফেডারেশনের ভূখণ্ডে যা ঘটছে তার জন্য দায়ী থাকতে পারে না। জেলেনস্কি আরও বলেন, “৯ মে পুতিনের একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে আমরা কোনো খেলা খেলব না।
বিজয় দিবসের এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য অস্ত্র বিরতি ঘোষণার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে, ইস্টার উৎসবেও প্রায় ৩০ ঘণ্টার জন্য সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন।
যদিও ইউক্রেন অভিযোগ করেছে যে রাশিয়া সেই সময়েও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন