মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক তুর্কি ছাত্রী রুমিয়া ওজতুর্ককে ভারমন্টে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত এই রায় দেয়।
জানা গেছে, ওজতুর্কের মুক্তির দাবিতে করা আবেদনের শুনানি সেখানে অনুষ্ঠিত হবে।
এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কাউকে এভাবে আটক রাখা উচিত নয়।
ওজতুর্কের আইনজীবী এশা ভান্ডারি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা তাকে তার কমিউনিটি এবং আইনজীবীদের থেকে দূরে রাখার সরকারের চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের উপকণ্ঠে নিজের বাড়ির সামনে থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য রুমিয়া ওজতুর্ককে গ্রেপ্তার করে।
তিনি তুরস্কের নাগরিক এবং ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে পরিচিত। একইসঙ্গে, তিনি টাফটস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে ওজতুর্ক তার ছাত্র পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর ওজতুর্ককে প্রথমে ভারমন্ট এবং পরে লুইজিয়ানায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আইনজীবীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে স্থানান্তরের মাধ্যমে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। এর ফলে ওজতুর্ক তার পরিবার, বন্ধু এবং আইনি সহায়তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
আদালতে ওজতুর্কের মুক্তির জন্য আবেদন করা হলে, নিম্ন আদালত তাকে ১ মের মধ্যে ভারমন্টে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
আপিল বিভাগ সরকারের এই আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালত জানায়, ওজতুর্কের স্থানান্তরে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ‘ক্ষতি’ প্রদর্শিত হয়নি।
অন্যদিকে, একই ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের বিষয়টিও আদালতে বিচারাধীন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে খলিলকে আটকের কারণ জানতে চেয়েছে আদালত।
তার আইনজীবী বলছেন, তাকে কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি।
আদালত জানিয়েছে, ওজতুর্কের শুনানি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লুইজিয়ানাতেও হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন চাইলে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মীদের আটকের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা