যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও, মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে বুধবার দিন শেষে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
ফেডের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, যা আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, তারা সুদের হার স্থিতিশীল রেখেছে। যদিও বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছিলেন, ব্যাংকটি সম্ভবত সুদের হার কমিয়ে দেবে।
তবে বাজারের এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এখন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তারা বিশ্ব অর্থনীতির দিকে নজর রাখছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে তাদের মনোযোগ।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরি পাওয়েল। তিনি বলেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
উভয় দেশের মধ্যে শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হলে তা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে। এমনকি এর ফলে বেকারত্বও বাড়তে পারে।
শেয়ার বাজারের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বুধবারের শুরুতে সূচকগুলো ওঠা-নামা করেছে। দিনের এক পর্যায়ে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৪০০ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছিল, কারণ বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
তবে পরে সেই আশা কিছুটা কমে যায়, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর কোনো পরিকল্পনা করছেন না।
ওয়াল স্ট্রিটের বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট এই অনিশ্চয়তা বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিখ্যাত কোম্পানি ওয়াল্ট ডিজনি তাদের মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় শেয়ার বাজারে ১০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রযুক্তি কোম্পানি মার্ভেল টেকনোলজি তাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত একটি দিন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে, যা বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউরোপের বাজারগুলোতেও দরপতন দেখা গেছে। তবে চীনের বাজারে, বেইজিংয়ের সুদের হার কমানো এবং অন্যান্য সহায়ক পদক্ষেপের কারণে সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
হংকং এবং সাংহাইয়েও শেয়ার বাজার ইতিবাচক ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এর ফলে দেশের রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহেও প্রভাব পড়তে পারে।
তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস