বৃহস্পতিবার: বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আসছেন ট্রাম্প!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বৃহস্পতিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিতে পারেন। তিনি নিজেই এই খবরটি দিয়েছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, “আগামীকাল সকাল ১০টায়, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে একটি বড় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সেখানে একটি বড় এবং অত্যন্ত সম্মানিত দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এটি অনেকের মধ্যে প্রথম!”

তবে ট্রাম্প ঠিক কোন দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে যাচ্ছেন, তা স্পষ্ট করেননি। যদিও তাঁর প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে ভারত, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।

বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন যে তারা এক ডজনের বেশি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তির ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্প প্রায়ই বলে আসছেন যে তিনি কোনো চুক্তি করতে তাড়াহুড়ো করছেন না। তাঁর মতে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঠকাচ্ছে’, তাই যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত উচ্চ শুল্ক বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে।

তবে, বাণিজ্য চুক্তিগুলো সাধারণত বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এতে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক এবং অশুল্ক বাধাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হয়। এছাড়া, রাজনৈতিক বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিভিন্ন পক্ষ তাদের ভোটারদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যে চুক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তা সম্ভবত একটি সমঝোতা স্মারক হতে পারে। এর ফলে, স্বল্প মেয়াদে নির্দিষ্ট কিছু দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক কমতে পারে, কিন্তু এর বড় কোনো অর্থনৈতিক প্রভাব দেখা যেতে হয়তো বেশ সময় লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশগুলোর ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা কঠিন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের বাণিজ্য নীতি বিশ্লেষক জ্যাকব জেনসেন বলেছেন, “এই চুক্তিগুলো যদি আনুষ্ঠানিক এবং লিখিত বাণিজ্য চুক্তি না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বেশি কেনার মৌখিক প্রতিশ্রুতি হয়, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাব থাকবে না।”

গত মাসে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি শুল্কের মেয়াদ আর বাড়াবেন না। এমনকি, যে দেশগুলোর সঙ্গে তাঁর প্রশাসন চুক্তি করতে পারছে না, তাদের ওপর তিনি হয়তো দ্রুতই কিছু শুল্ক পুনর্বহাল করতে পারেন।

জেনসেন আরও বলেন, “যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প নব্বই দিনের মধ্যে একশটির বেশি বাণিজ্য চুক্তি করতে না পারেন, তাহলে তিনি হয়তো শুল্ক পুনর্বহাল করবেন অথবা সময় বাড়াবেন।”

আগেও দেখা গেছে, ট্রাম্প তাঁর আগের নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি কানাডা এবং মেক্সিকোর সঙ্গে ইউএসএমসিএ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছিলেন।

কিন্তু পরে, তিনি আবার মেক্সিকো এবং কানাডার কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

সুতরাং, ট্রাম্পের এই সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব কেমন হবে, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) এবং প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর এর প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *