কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা : যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ
জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্তী শহর ও গ্রামগুলোতে গোলাগুলির কারণে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, ঘরবাড়ি হারাচ্ছে মানুষ।
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যেকার উত্তেজনা মারাত্মক রূপ নেওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আল জাজিরার খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপার থেকে হওয়া গোলাবর্ষণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সেখানকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক নারী আহাজারি করছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমার গড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গত ৭ই মে থেকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ছোড়া গুলিতে পুঞ্চ জেলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও কাশ্মীর অঞ্চলে বেশ কিছু জায়গায় আঘাত হানে।
এই ঘটনার জের ধরেই সীমান্তের দুই পাশে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
স্থানীয়দের মতে, গত ৪০ বছরের মধ্যে এবারের গোলাগুলি সবচেয়ে তীব্র ছিল। পুঞ্চের বাসিন্দা রামিজ চৌধুরী আল জাজিরাকে জানান, “এ এক বিভীষিকাময় রাত ছিল।”
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিশু, কিশোর এবং নারী সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একটি পরিবারের দুই সন্তানও রয়েছে, যাদের ঘর লক্ষ্য করে শেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
এছাড়াও, গোলাগুলিতে বেশ কয়েকজন দোকান মালিক, একজন সাত বছর বয়সী শিশু, একজন কিশোর এবং একজন গৃহবধূ নিহত হয়েছেন।
পুঞ্চ জেলার শাহপুর, মানকোট এবং কৃষ্ণ ঘাটি গ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া রাজৌরি জেলার লাম, মানজাকোট এবং গম্ভীর ব্রাহ্মণা এলাকাতেও গোলাগুলি বেড়েছে, যার ফলে বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।
জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকেই সীমান্তের এই উত্তেজনা শুরু হয়। গত ২২শে এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি, ভারতীয় সামরিক যুদ্ধবিমানগুলো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাত হেনেছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যেকার এই উত্তেজনা ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কারণ, এবার সীমান্তের অনেক ভেতরে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের পরিচালক তারা কারথা বলেন, “পাহলগামের ঘটনার মাধ্যমে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।”
জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ আমিন জানান, “আমরা যুদ্ধ চাই না।” পুঞ্চ শহরটি নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল) থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
তিনি আরও বলেন, “গতকাল থেকে অবিরাম গোলাগুলি চলছে। তবে এখন তা কিছুটা কমেছে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে জম্মু অঞ্চলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাফর চৌধুরী বলেন, “সরকারের উচিত ছিল, আগে থেকেই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া।”
জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করতে শুরু করেছে।
উরি জেলার কামালকোটে গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমদ বলেন, “যুদ্ধ কোনো আনন্দের বিষয় নয়। যখন শেল এসে পরে, তখন সে কারো পরিচয় জানতে চায় না। যারা যুদ্ধের জন্য উসকানি দিচ্ছে, তারা জানে না, রাতে যখন শিশুরা ঘুমিয়ে থাকে, তখন তাদের ওপর শেল পড়লে কেমন লাগে।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা