অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোককথার সাক্ষী, ক্ষুদ্র জাদুঘরগুলি।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট জাদুঘরগুলি যেন এক একটি জীবন্ত ইতিহাস। স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর মানুষের জীবনযাত্রার এক একটি উজ্জ্বল চিত্র তারা সবসময় দর্শকদের সামনে তুলে ধরে।
এই জাদুঘরগুলির গল্প নিয়ে কাজ করেছেন শিল্পী সিমোন রোজেনবাউয়ার। ‘স্মল মিউজিয়াম’ (Small Museum) নামে তাঁর এই প্রকল্পে অস্ট্রেলিয়ার নানা প্রদেশের প্রায় ৪১টি ছোট জাদুঘরের ছবি ও সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
নিউ সাউথ ওয়েলসের টিংগা শহরের ‘উইং হিং লং অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের একটি দোকান, যা এখন জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই দোকানে এখনো পুরোনো দিনের খাদ্যসামগ্রী, পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সাজানো রয়েছে।
দেখলে মনে হয় যেন সময় থমকে গেছে। সিমোন রোজেনবাউয়ারের ভাষায়, “এখানে গেলে যেন ইতিহাসের পাতায় ফিরে যাওয়া যায়।” এই ধরনের জাদুঘরগুলো অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই প্রকল্পের শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে, যখন রোজেনবাউয়ার জার্মানি থেকে আসা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি বেশ কয়েকটি ছোট জাদুঘর ঘুরে দেখেন।
জার্মানির সুসংগঠিত জাদুঘরের সঙ্গে এখানকার জাদুঘরগুলোর একটা বড় পার্থক্য তিনি লক্ষ্য করেন। এখানকার মানুষগুলোর ভালোবাসা, আবেগ আর সৃজনশীলতা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
সিমোনের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, শহরের বড় জাদুঘরগুলোর বাইরে থাকা এই ছোট ছোট জাদুঘরগুলোর গল্প তুলে ধরা। তিনি মনে করেন, এই জাদুঘরগুলি স্থানীয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
প্রত্যেকটি জাদুঘরের কর্মীরা তাঁদের এলাকার ইতিহাস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। রোজেনবাউয়ার তাঁদের ছবি তুলেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর মতে, এই কর্মীরাও জাদুঘরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, কারণ তাঁরা ইতিহাসের সাক্ষী।
২০১০ সালে রোজেনবাউয়ার তাঁর ছবি তোলার কাজ শেষ করেন। এরপর তাঁর এই প্রকল্পের ছবিগুলো নিউইয়র্কের লরেন্স মিলার গ্যালারি এবং প্যারিস ফটো ফেয়ারে প্রদর্শিত হয়েছে।
২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল লাইব্রেরি তাঁর কিছু ছবি সংগ্রহ করে। সম্প্রতি, তাঁর ছবি ও সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি প্রেমীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
রোজেনবাউয়ার মনে করেন, এই জাদুঘরগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, অনেক ছোট জাদুঘর নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং হয়তো ভবিষ্যতে তাদের অনেককেই হারিয়ে যেতে হবে।
এই জাদুঘরগুলির সংগ্রহ, তাদের গল্পগুলো, সবকিছুই যেন কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাঁর এই কাজটি, এইসব ঐতিহ্যকে ধরে রাখার একটি প্রচেষ্টা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে, রোজেনবাউয়ার অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন এবং এখানকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, এই ছোট জাদুঘরগুলি সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো একটি অমূল্য সম্পদ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান