মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (FAA) পুরনো প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, যা বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে একটি ঘটনা এই সমস্যার গুরুতর দিকটি পুনরায় সামনে এনেছে।
গত ২৮শে এপ্রিল, নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় রাডার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। এর ফলে সেখানকার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের কর্মীরা বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং তাদের অবস্থান জানতে সমস্যায় পড়েন।
এই ঘটনার কারণ হিসেবে জানা গেছে, তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত তামার তারে ত্রুটি দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের সেক্রেটারি শন ডাফি বলেছেন, নিউয়ার্ক বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি ‘অত্যন্ত পুরনো’। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) জানিয়েছে, তারা এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে, তারা তিনটি নতুন, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিযোগাযোগ সংযোগ স্থাপন করতে যাচ্ছে এবং তামার তারের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এছাড়াও, ফিলাডেলফিয়া টার্মিনাল রাডার অ্যাপ্রোচ কন্ট্রোলের জন্য একটি অস্থায়ী ব্যাকআপ সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
FAA-এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, কর্মী সংখ্যাও বাড়ানো হবে এবং আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে, এই প্রযুক্তিগত দুর্বলতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই FAA-এর প্রযুক্তিগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, FAA-এর ১৩৮টি সিস্টেমের মধ্যে ৫১টি অচল এবং ৫৪টি সম্ভবত অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
FAA-এর প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে অতীতেও বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে, পাইলটদের ফ্লাইট-পূর্ববর্তী নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তি প্রদানের একটি সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেয়, যার ফলে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছিল।
এই ধরনের ঘটনাগুলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতার পাশাপাশি, কর্মী সংকটও একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে, নিউ ইয়র্কের N90 ফ্যাসিলিটিতে কর্মী নিয়োগ ও ধরে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণে, অনেক সময় ফ্লাইট পরিচালনায় বিলম্ব হয়।
FAA-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে— পুরাতন তামার তারের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপন, কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে বিদ্যমান অটোমেশন সিস্টেমের আধুনিকীকরণ।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানের জন্য স্টারলিঙ্ক-এর (Starlink) মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরীক্ষাও চলছে।
বর্তমানে, FAA-এর এই প্রযুক্তিগত দুর্বলতা কিভাবে সমাধান করা যায়, সেই বিষয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ এবং কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন