আলোচনায় গোয়েন্দা প্রধান: সিআইএ-তে কি কাটছাঁট?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-তে (CIA) আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই সংস্থার কর্মপদ্ধতিতে কাটছাঁট এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, মাঠ পর্যায়ে গুপ্তচর নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা বিশ্লেষকদের সংখ্যা কমানো।

সিআইএ-র এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সংস্থাটির বর্তমান পরিচালক জন র্যাটক্লিফের ভূমিকা নিয়ে। হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেও তিনি চেষ্টা করছেন সংস্থার কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জনের। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধারণা, র্যাটক্লিফ সিআইএকে ‘ডিপ স্টেট’-এর অংশ হিসেবে দেখেন।

কিছু কর্মকর্তার মতে, র্যাটক্লিফ সম্ভবত এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে সিআইএর কর্মীরা পেশাদার, এবং এখানে তথাকথিত ‘গভীর রাষ্ট্র’ বলে কিছু নেই। তবে অনেকের ধারণা, তিনি এমন একটি হোয়াইট হাউজের সঙ্গে কাজ করছেন যারা এখনো ‘গভীর রাষ্ট্র’-এর ধারণা পোষণ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, র্যাটক্লিফ সম্ভবত তাঁর বেশিরভাগ সময় হোয়াইট হাউজে কাটান। ফলে কর্মীদের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে তিনি কার্যত সংস্থার কাজে খুব একটা মনোযোগ দেন না। এমনকি এমনও শোনা যাচ্ছে, কে আসল পরিচালক, তা নিয়েও অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে। অনেকের মতে, এই অনিশ্চয়তার কারণে দক্ষ কর্মীরা হয়তো চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।

সিআইএর সদর দপ্তর ল্যাংলিতে কর্মরত ও সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাটক্লিফকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করেন, ট্রাম্পের আমলে সিআইএ প্রধান হিসেবে তিনি ‘সবচেয়ে খারাপ’ নন।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, র্যাটক্লিফের সবসময় হোয়াইট হাউজে থাকাটা ভালো। কারণ, এতে বোঝা যায়, প্রেসিডেন্ট এখনো তাকে গুরুত্ব দেন।

এখন পর্যন্ত র্যাটক্লিফ এমন কোনো বড় ধরনের কাটছাঁট করেননি, যা অন্যান্য সরকারি সংস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর মিত্ররা যে সিআইএকে নতুনভাবে সাজাতে চান, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে র্যাটক্লিফকে সংস্থাটি নিজের মতো করে পরিচালনা করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, র্যাটক্লিফ আসলে হোয়াইট হাউস ও সিআইএর মধ্যে এক প্রকার বাফার হিসেবে কাজ করছেন।

আরেকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, র্যাটক্লিফ সম্ভবত সিআইএর কর্মীদের এবং তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁর অধিকাংশ সময় কাটে হোয়াইট হাউজে। সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাই তাঁর ডেপুটি, মাইকেল এলিসের ওপর বেশি দায়িত্ব বর্তায়।

সিআইএর মুখপাত্র লিজ লায়ন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পরিচালক র্যাটক্লিফ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে, সিআইএ প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অগ্রাধিকারগুলো নিবিড়ভাবে অনুসরণ করবে। সংস্থাটি প্রেসিডেন্টের জন্য একটি অনন্য সুবিধা তৈরি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং পরিচালক র্যাটক্লিফের অধীনে এটি আগ্রাসীভাবে কাজ করছে। এর বিপরীত কোনো ইঙ্গিত ভিত্তিহীন।

সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র্যাটক্লিফ তাঁর দায়িত্বের প্রথম কয়েক মাসে অনেকটা গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন। তিনি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন এবং কিছু নির্দিষ্ট গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

বিদেশনীতি বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

জানা গেছে, গত এপ্রিলে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্প র্যাটক্লিফকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিকে, র্যাটক্লিফ রাশিয়ায় আটক হওয়া কয়েকজন আমেরিকানকে মুক্ত করতে সহায়তা করেছিলেন।

তবে সিআইএর কর্মীরা র্যাটক্লিফের এই ধরনের কাজের ধরনে কিছুটা অসন্তুষ্ট। কারণ, জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে, এমন অনেকেই আছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা গণমাধ্যমে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, গোপন যোগাযোগের জন্য ‘সিগন্যাল’ ব্যবহার করা হয়েছিল, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাঁদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

সিআইএর কর্মীরা এখন বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ, র্যাটক্লিফ চাইছেন কর্মীদের ছাঁটাই করতে, সংস্থার পুনর্গঠন করতে এবং বারাক ওবামার আমলে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বাতিল করতে।

সংস্থা সূত্রে খবর, আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১,২০০ কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কর্মীদের অবসরে পাঠানো, পদত্যাগ এবং নতুন নিয়োগ কমিয়ে দেওয়া।

তবে সিআইএর অপারেশন বিভাগে কর্মী নিয়োগে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং বিশ্লেষকদের কিছু পদ কমানো হতে পারে। এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট।

সিআইএর সাবেক পরিচালক জন ব্রেনানের সংস্কার বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলোও এখন নতুন করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, এই সংস্কারের কারণে বিশ্লেষকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে।

এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, সিআইএ মাদক ও মাদক চোরাচালান বিরোধী কার্যক্রমকে আরও গুরুত্ব দিতে চাইছে। মেক্সিকোর আকাশসীমায় নজরদারির জন্য ড্রোন মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অভিযান চালানোর জন্য আইনগত দিকগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *