শিরিন আবু আকলেহ’র হত্যাকারী সনাক্ত! ইসরায়েলি সৈন্যর পরিচয় ফাঁস!

ফিলিস্তিনের সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ইসরায়েলি সেনার পরিচয় উন্মোচন করেছে একটি নতুন তথ্যচিত্র। ‘হু কিলড শিরিন?’ (Shireen Abu Akleh কে হত্যা করেছে?) শীর্ষক ৪০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানি জিটিও (Zeteo)। এতে দাবি করা হয়েছে, যে ইসরায়েলি সেনা গুলি চালিয়েছিলেন, তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর এবং তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাঁর প্রথম অভিযানে ছিলেন।

২০২২ সালের ১১ মে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি প্রেস চিহ্নিত পোশাক পরে ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক।

তথ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে, কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল চেষ্টা করেছে।

তথ্যচিত্রের নির্বাহী প্রযোজক ডায়ন নিসেনবাম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল— কে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, তা খুঁজে বের করা। কারণ, ইসরায়েল এতদিন এই তথ্য গোপন রেখেছিল।

নিসেনবাম আরও জানান, তাঁরা আশা করছেন, এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও তদন্ত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল, একজন ইসরায়েলি সেনা ইচ্ছাকৃতভাবে শিরিনের ওপর গুলি চালিয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে সেই সিদ্ধান্তকে বাতিল করা হয়।

নিসেনবাম যোগ করেন, তাঁরা এমন কিছু প্রমাণ পেয়েছেন যা ইঙ্গিত করে যে, ইসরায়েল এবং বাইডেন প্রশাসন— উভয়ই শিরিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে এবং অভিযুক্ত সেনাকে কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি।

শিরিনের ভাই আন্তন আবু আকলেহ বলেছেন, এই তথ্যচিত্রটি তাঁদের পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এটি আরও বেশি তথ্য সামনে আনবে এবং প্রমাণ করবে যে, ফিলিস্তিনে অন্যান্য সাংবাদিকদের মতো, শিরিনও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।’

তথ্যচিত্রে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গেই নয়, ইসরায়েলের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, সেনা সদস্য এবং শিরিনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন এমন সাংবাদিকদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

আবু আকলেহর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে শোকের সৃষ্টি করেছিল এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মতে, বিভিন্ন তদন্তে জানা গেছে, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসরায়েলি সেনারা শিরিনকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েল প্রথমে এই ঘটনার দায় অস্বীকার করে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। তবে পরে তারা তাদের সৈন্যদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং এটিকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে।

এক বছর পর, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আবু আকলেহর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে, তবে অভিযুক্ত সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলের কাছে ঘটনার তদন্তের দাবি জানানো হয়নি।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (Reporters Without Borders)-এর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক অভিযানের প্রথম ১৮ মাসে, ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ২০০ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৪২ জন তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় নিহত হয়েছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *