ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা, ড্রোন হামলা ও হতাহতের ঘটনা, বাড়ছে সংঘাতের শঙ্কা।
নয়াদিল্লী ও ইসলামাবাদ: কাশ্মীর সীমান্তকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে ভারত তাদের ওপর ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, তারা ভারতের ছোড়া বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। অন্যদিকে, দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ভারতীয় ড্রোনগুলি পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে একটি ড্রোন লাহোরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যাতে চারজন সেনা আহত হয়েছে।
এছাড়া সিন্ধু প্রদেশে ড্রোন থেকে পড়া ধ্বংসাবশেষের আঘাতে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা অন্তত ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলার তীব্র নিন্দা করে নিহতদের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভবনা বাড়ছে।
অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা ড্রোন ব্যবহারের কথা সরাসরি স্বীকার করেনি। গত কয়েক সপ্তাহে কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পরে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।
গত মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতেও বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার ভারতীয় হামলায় ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলিতে তাদের ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৫৯ জন আহত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, বুধবার এক ভারতীয় সেনা সদস্যও নিহত হয়েছেন।
উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে, ভারত কাশ্মীর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছে।
পাকিস্তানের দিকেও প্রায় ২,০০০ জন গ্রামবাসী তাদের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।
দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের পাশাপাশি ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর এবং শিয়ালকোট সহ পাকিস্তানের চারটি বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে দুই দেশ একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস