ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে চাকরি হারানো কর্মীদের জীবনে চরম বিপর্যয়!

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কর্মীদের চাকরি সুরক্ষায় ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ফেডারেল কর্মীদের চাকরি নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। এই সময়কালে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার পথও কঠিন করে তোলা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক অধিকার রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোতেও পরিবর্তন আনা হয়, যা কর্মীদের অধিকারের পরিপন্থী ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন ঘটনা আগে দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল কর্মচারীদের অধিকার রক্ষার জন্য গঠিত স্বাধীন বোর্ডগুলোর ক্ষমতা হ্রাস করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ পদে ট্রাম্পের অনুগতদের বসানো হয় এবং অনেক ফেডারেল কর্মীর জন্য সম্মিলিত দর কষাকষির অধিকার বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়।

এর ফলে, সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ কমে যায়। অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হন, আবার অনেকে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন।

আগে সরকারি কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কংগ্রেস কিছু নিয়ম তৈরি করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময় সেসব দুর্বল হয়ে পড়ে।

অনেক কর্মী, যাদের মধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া এবং স্থায়ী—উভয় ধরনের কর্মচারী ছিলেন, তারা তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, অনেক কর্মী হয় চাকরি হারিয়েছেন, নয়তো স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমন অবস্থায় কিছু নাগরিক সংগঠন চাকরিচ্যুত কর্মীদের রাজ্য ও স্থানীয় সরকারে নতুন চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে।

একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের পক্ষে আদালতে লড়াই চালিয়ে যায়।

হোয়াইট হাউসের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী বিভাগের প্রধান এবং তিনি যে কাউকে বরখাস্ত করার অধিকার রাখেন।”

এই পরিস্থিতিতে, বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের জন্য প্রতিকূলতা তৈরি হয়, যা বিশেষভাবে দেখা যায় ‘অফিস অব স্পেশাল কাউন্সেল’-এর (ওএসসি) ক্ষেত্রে। এই সংস্থাটি ফেডারেল সরকারের কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে, হ্যাম্পটন ডেলিংগার ওএসসিতে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল ফেডারেল কর্মী সংখ্যা কমানো।

ডেলিংগার মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের নেওয়া ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই বেআইনি। তিনি কর্মীদের স্বপদে পুনর্বহাল করার জন্য ‘মেরিট সিস্টেমস প্রোটেকশন বোর্ড’-কে (এমএসপিবি) রাজি করিয়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ ৬,০০০ কর্মীকে পুনর্বহাল করা হয়।

কিন্তু এর পরেই ট্রাম্প ডেলিংগারকে বরখাস্ত করেন। ডেলিংগার তার নিজের বরখাস্তের বিরুদ্ধে আদালতে হেরে যান।

এরপর ট্রাম্প তার জায়গায় অনুগত দুজনকে নিয়োগ দেন। এর ফলে ওএসসি কর্মীদের স্বপদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

ওএসসি কিছু ফেডারেল কর্মীকে জানায়, তারা তাদের বরখাস্তের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কর্মী ছাঁটাই নতুন প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী সঠিক ছিল। ডেলিংগারের সময়ে ওএসসির নেওয়া অবস্থানের এটি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট স্কাই পেরিমান বলেন, “আমরা এখন দেখছি ওএসসি সেই কাজগুলো করছে না, যা তাদের করার কথা। প্রশাসন কর্মীদের প্রতিকার এবং সরকারি চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি কাঠামোকে দুর্বল করতে চাইছে।”

ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল শ্রম বোর্ডগুলোকেও দুর্বল করেছে। এমএসপিবি এবং ইকুয়াল এমপ্লয়মেন্ট अपॉर्चुनिटी কমিশন (ইইওসি)-এর মতো বোর্ডগুলোতে কোরাম পূরণ হয়নি, কারণ ট্রাম্প বেশ কয়েকজন সদস্যকে বরখাস্ত করেছিলেন। এর ফলে বোর্ডগুলো তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারছিল না।

এমএসপিবি মুখপাত্র, জ্যাচারি কুর্জ জানান, সংস্থাটি এখনো খোলা আছে এবং তাদের কার্যক্রম চলছে। ইইওসি মুখপাত্র জেমস রায়ান বলেছেন, কমিশন এখনো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং অভিযোগ গ্রহণ করছে।

ফেডারেল কর্মীদের বরখাস্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়েও অনেক সমস্যা দেখা যায়। ইউনিয়ন নেতারা তাদের সদস্যদের এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে সাহায্য করতেন, কিন্তু ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে সেই সুযোগও কমে যায়।

অনেক কর্মীর মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয় যে, তারা ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

ন্যাশনাল ট্রেজারি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের অ্যালেক্স বারম্যান জানান, “অধিকাংশ কর্মচারী তাদের চাকরির নিয়মকানুন সম্পর্কে জানেন, তবে কোনো পরিস্থিতিতে কী প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম থাকে।

ইউনিয়ন না থাকলে, কর্মীরা তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অন্ধকারে থাকেন।”

এদিকে, বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের অনেকেই নতুন চাকরির সন্ধান করছেন। ‘ওয়ার্ক ফর আমেরিকা’র নির্বাহী পরিচালক ক্যাটলিন লুইস একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যেখানে ফেডারেল কর্মীরা রাজ্য ও স্থানীয় সরকারে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।

ক্যাটলিন লুইস বলেন, “তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষ এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো তাদের ক্ষমতা হারাচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

তারা মনে করেন, ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যবস্থার মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। এই অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির মধ্যে তাদের মনে হচ্ছে, এই ব্যবস্থা তাদের অধিকার রক্ষা করবে না।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *