উত্তাল সমুদ্রে: শীঘ্রই ফুঁসতে পারে আগ্নেয়গিরি, বাড়ছে ভূমিকম্প!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন উপকূলের কাছে অবস্থিত একটি বিশাল জলমগ্ন আগ্নেয়গিরি, যার নাম অ্যাক্সিয়াল সিমাউন্ট, সম্ভবত শীঘ্রই বিস্ফোরিত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের (National Science Foundation) ওশান অবজারভেটরিজ ইনিশিয়েটিভ রিজিয়নাল ক্যাবলড অ্যারে (Ocean Observatories Initiative Regional Cabled Array) নামক একটি গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

এই প্রকল্পের অধীনে, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অ্যাক্সিয়াল সিমাউন্টের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের প্রায় ১.৪ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরিটিতে সম্প্রতি ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি, ম্যাগমার (গলিত শিলা) পরিমাণও বাড়ছে, যা আসন্ন অগ্নুৎপাতের ইঙ্গিত দেয়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মেরিন জিওফিজিসিস্ট উইলিয়াম উইলকক (William Wilcock) জানিয়েছেন, “বর্তমানে, প্রতিদিন কয়েকশ ভূমিকম্প হচ্ছে, তবে আগের অগ্নুৎপাতের আগে যা দেখা গিয়েছিল, তার থেকে এই সংখ্যা এখনো অনেক কম।” তিনি আরও জানান, এই বছর অথবা সম্ভবত ২০২৬ সালের শুরুর দিকে এখানে অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে।

তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত হওয়ায়, যেকোনো সময়েই এটি ঘটতে পারে।

আগের অগ্নুৎপাতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগমা নির্গত হয় এবং এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি লাভা স্রোত তৈরি হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সামুদ্রিক জীবনের উপর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অগ্ন্যুৎপাতের সময় লাভা প্রবাহের কারণে কিছু জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, অগ্ন্যুৎপাতের কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানকার পরিবেশ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

আকর্ষণীয় বিষয় হলো, বিজ্ঞানীরা এই অগ্নুৎপাত সরাসরি দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা এর আগে কখনো কোনো জলমগ্ন অগ্নুৎপাত পর্যবেক্ষণ করেননি। তবে এবার, তাঁরা এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে চান এবং জনসাধারণের জন্য এটি সরাসরি সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করছেন।

অ্যাক্সিয়াল সিমাউন্টের অগ্ন্যুৎপাতের সময় নিয়েও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন।

তাঁদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ১৯৯৮, ২০১১ এবং ২০১৫ সালের অগ্ন্যুৎপাতগুলো জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে হয়েছিল। এই সময়ে পৃথিবীর অবস্থান সূর্যের থেকে কিছুটা দূরে থাকে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর পেছনে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব থাকতে পারে, যা সমুদ্রের স্রোতকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ বাড়ে।

জলমগ্ন আগ্নেয়গিরি অধ্যয়নের গুরুত্ব অনেক। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অভ্যন্তরীন গঠন এবং ভূ-প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন। যেহেতু বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ, তাই এই ধরনের গবেষণা আমাদের দেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *