শিরোনাম: ভারত-পাকিস্তান: ড্রোন যুদ্ধের সূচনা? কাশ্মীর কেন্দ্রিক উত্তেজনার পারদ
জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনা এবার নতুন মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অভিযোগ এনেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ভারতীয় অনেকগুলো ড্রোন ভূপাতিত করেছে, অন্যদিকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ‘ড্রোন যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
পাকিস্তানের সামরিক সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে গত রাতে ভারতের পাঠানো ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এই ড্রোনগুলো পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন – লাহোর ও করাচিতে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ড্রোন হামলার ফলে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (Ministry of Defence) এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে তারা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
ভারতের দাবি, তারা লাহোরে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘নিষ্ক্রিয়’ করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও কাশ্মীর অঞ্চলে আক্রমণের চেষ্টা করেছিল, তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে ড্রোন হামলাকে ‘নগ্ন আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন পাকিস্তান যে কোনো ধরনের হুমকির মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, ভারতীয় ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে সামরিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতীয় সামরিক সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, গত ৭-৮ মে রাতে পাকিস্তানের সেনারা ভারতের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানার চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলোকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতীয় ড্রোনগুলো লাহোর, করাচি, গুজরাওয়ালা, চাকওয়াল, রাওয়ালপিন্ডি, অ্যাটক, নানকানা সাহেব, বাহাওয়ালপুর, মিয়ানো, চোর, ঘোটকি, সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে আঘাত হানার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলি জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানের বিভিন্ন শহরে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল। এর মধ্যে ছিল অবন্তীপোরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কাপুরথালা, জালন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভাটিন্দা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই এবং ভুজ-এর মত শহরগুলো।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দেশের এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং ড্রোন ব্যবহারের ঘটনা কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। অতীতেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সেনারা সম্ভবত ‘হারোপ’ ড্রোন ব্যবহার করেছে। এই ড্রোনগুলো ‘লয়েটারিং অ্যামিউনিশন’ বা আত্মঘাতী ড্রোন হিসেবে পরিচিত।
এগুলো আকাশে অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করার পর সেটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিস্ফোরিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের মধ্যে যেকোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা উত্তেজনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
কারণ, উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা