বিল গেটস, প্রযুক্তি জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, তাঁর অবশিষ্ট সম্পদের ৯৯ শতাংশ গেটস ফাউন্ডেশনে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ আগামী ২০ বছরে খরচ করা হবে এবং ২০৪৫ সাল নাগাদ ফাউন্ডেশনটি বন্ধ হয়ে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত জনহিতকর কাজের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গেটস ফাউন্ডেশন ২০০০ সালে বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা খরচ কমানোর পাশাপাশি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতেও সহায়তা করেছে এই ফাউন্ডেশন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাতেও গেটস ফাউন্ডেশনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।
বিল গেটসের এই অনুদান প্রদানের ফলে ফাউন্ডেশনটি আগামী ২০ বছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে পারবে। এর ফলে পোলিও নির্মূল, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অপুষ্টির শিকার শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।
গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজম্যানের মতে, এই সময়ের মধ্যে ফাউন্ডেশন তার প্রধান অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দেবে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দেবে। ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রতিরোধযোগ্য রোগের কারণে শিশুদের মৃত্যুহার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
গেটস মনে করেন, এই মুহূর্তে অর্থ খরচ করার ফলে ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে অন্যদের সুবিধা হবে।
গেটস ফাউন্ডেশনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পাশাপাশি, ফাউন্ডেশনের পরিচালনাতেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের বিবাহবিচ্ছেদ এবং ওয়ারেন বাফেটের ট্রাস্টি পদ থেকে সরে দাঁড়ানো এর মধ্যে অন্যতম।
মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস বর্তমানে তাঁর নিজস্ব সংস্থা ‘পাইভোটাল ভেঞ্চারস’-এর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইউক্রেন ও গাজায় চলমান সংঘাত এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসের কারণে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও গেটস ফাউন্ডেশন আশা প্রকাশ করেছে, তারা স্বাস্থ্যখাতে তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে।
বিল গেটস মনে করেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগিয়ে আসা।
গেটস ফাউন্ডেশনের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি বিশাল ঘটনা, যা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস