বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন: বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে ২৫ বছরের প্রভাব এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা।
বিশ্বের বৃহত্তম দাতব্য সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
সম্প্রতি, তাদের কার্যক্রমের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে সংস্থাটি স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, যার অর্ধেকটাই গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায়।
এই বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে সহায়তা করেছে।
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন তৈরির মূল অনুপ্রেরণা ছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতা। বিশেষ করে, স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে শিশুদের মৃত্যুহার ছিল উদ্বেগজনক।
এই সমস্যাগুলো সমাধানে বিল গেটস তার নিজস্ব পদ্ধতিতে, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন। তাদের এই উদ্যোগের ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে গেটস ফাউন্ডেশন একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জনহিতকর কাজের ধারণাকেও তারা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ফাউন্ডেশনের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের কর্মীদের দক্ষতা, বিভিন্ন সরকার ও কোম্পানির সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের পরিচিতি।
তবে, এত বিশাল ক্ষমতা থাকার কারণে তাদের কাজের সমালোচনাও হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গেটস ফাউন্ডেশনের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে খুব বেশি সহায়ক হয়নি।
বিশেষ করে, স্বল্প খরচে রোগ নিরাময়ের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি অনেক সময় উপেক্ষিত হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজম্যান বলেন, তারা কোনো অনুদান দেওয়ার পর ফলাফল জানতে তিন বছর অপেক্ষা করেন না। বরং নিয়মিতভাবে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
গেটস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ভ্যাকসিন, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রোগ নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি তৈরিতে সহায়তা করেছে, যা তাদের অন্যতম সাফল্য। তাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভি-র মতো রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করা।
গেটস ফাউন্ডেশন মূলত দুটি প্রধান পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে কাজ করে: একটি হলো ‘গ্যাভি’ (Gavi), যা শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করে এবং অন্যটি হলো ‘গ্লোবাল ফান্ড’, যা সরকারগুলোর সঙ্গে মিলিতভাবে এইচআইভি, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য অর্থ সরবরাহ করে।
এই দুটি সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।
তবে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গেটস ফাউন্ডেশনের মতো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপগুলো নাগরিক সমাজের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
কারণ, এতে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা কমে যায়।
বিল গেটস জানিয়েছেন, ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ফাউন্ডেশনটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং সে সময়ের মধ্যে তিনি তার অবশিষ্ট সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করে দেবেন।
বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০৭ বিলিয়ন ডলার। গেটসের মতে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে এই কাজে যুক্ত রাখা।
বিল গেটস আরও আশা করেন, ভবিষ্যতে অন্যরা তার চেয়েও বেশি জনহিতকর কাজ করবে। তিনি চান, মানুষ তার চেয়ে বেশি কর দিক, আরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচাক এবং তার চেয়েও বেশি অর্থ দান করুক।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসের কারণে গেটস ফাউন্ডেশনের কিছু লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যেমন, পোলিও নির্মূল করা, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস করা। এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও গেটস ফাউন্ডেশন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।