যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া অ্যাট্রিবিউশন (World Weather Attribution – WWA) গ্রুপের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে এবং এমন দুর্যোগের সম্ভাবনাও বেড়েছে।
এই গবেষণা অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
এপ্রিল মাসের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত হওয়া এই বৃষ্টি, টর্নেডো এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরকানস, কেনটাকি, টেনেসিসহ আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ২৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যার কারণে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং যানবাহন জলমগ্ন হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই দুর্যোগের মূল কারণ ছিল মেক্সিকো উপসাগরের উষ্ণতা। সেখানকার পানির তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি ছিল।
বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই উষ্ণতা ১৪ গুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউএ’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের মত বৃষ্টিপাতের ঘটনা সাধারণত প্রতি ১০০ বছরে একবার ঘটতে দেখা যায়।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই ধরনের অতিবৃষ্টির ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো দূষিত গ্যাসের নির্গমন যদি কমানো না যায়, তাহলে এমন দুর্যোগ আরও বাড়বে এবং তা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল পলিসির গবেষক ও এই গবেষণার প্রধান লেখক বেন ক্লার্ক বলেছেন, “আমরা যদি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ না করি, তাহলে এ ধরনের ঘটনা কেবল ঘটবেই না, বরং তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে, ফলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও বাড়ছে।
সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাষ্পীভবনের হার বৃদ্ধি পায়, যা ঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প সরবরাহ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (NWS) এপ্রিলের ভারী বৃষ্টির দিনগুলোর আগে থেকেই সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করেছিল। এর ফলে হতাহতের সংখ্যা হয়তো কিছুটা কমানো গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এনডব্লিউএস-এর কর্মী ও বাজেট কমানোর কারণে অনেক অফিসের কর্মীর পদ শূন্য হয়ে যায়, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণ।
আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ুবিদ্যার অধ্যাপক র্যান্ডাল সারভেনি, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, “যদি আমরা এই ধরনের অফিসগুলো কমিয়ে দিই বা কর্মী সংখ্যা হ্রাস করি, তাহলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আরও বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। কারণ, সময় মতো সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব হবে না।
এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের একটি উদাহরণ, যা বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগের প্রভাব কমিয়ে আনা যায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP)