যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে সম্প্রতি এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা নজিরবিহীন। রাস্তাঘাটের বিবাদে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তের বিচারকালে, নিহত ব্যক্তির পরিবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মৃতের একটি ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করে।
সেই ডিজিটাল সংস্করণটি আদালতে ভিকটিম ইম্প্যাক্ট স্টেটমেন্ট বা ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য পেশ করে, যা শুনলে মনে হয় যেন মৃত ব্যক্তি নিজেই কথা বলছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি আদালতে। ২০১৭ সালে ক্রিস্টোফার পেলকে নামের এক ব্যক্তিকে রাস্তার ঝগড়ার জেরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযুক্ত গ্যাব্রিয়েল পল হোরকাসিটাসকে পরে এই হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মামলার শুনানিতে, নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা আদালতে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।
এরপর, এক অভাবনীয় ঘটনার জন্ম হয়, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা পেলকের ডিজিটাল সংস্করণটি আদালতের সামনে কথা বলে।
আদালতে পেশ করা এই ডিজিটাল বক্তব্যে পেলকে তাঁর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি ক্ষমা এবং সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি। আমি সবসময়ই তা করি।”
ডিজিটাল পেলকে আরও বলেন, জীবনের প্রতিটি দিনকে ভালোভাবে উপভোগ করা উচিত এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করা উচিত, কারণ কারো হাতে কতটুকু সময় আছে, তা বলা কঠিন।
এই অভিনব ঘটনার মাধ্যমে, আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাধারণত, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় প্রশাসনিক কাজ, আইনি গবেষণা এবং মামলার প্রস্তুতিমূলক কাজে।
তবে, ভিকটিম ইম্প্যাক্ট স্টেটমেন্ট তৈরিতে এআইয়ের ব্যবহার সম্ভবত এই প্রথম।
এই মামলার বিচারক টড ল্যাং জানান, তিনি যখন ভিডিওটি দেখেন, তখন তাঁর মনে হয়েছে, পেলকে হয়তো এমনটাই অনুভব করতেন।
বিচারক আরও উল্লেখ করেন, ভিডিওটিতে পেলকের পরিবারের অনুভূতির কথাও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা হোরকাসিটাসের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন।
আদালতের এই রায়ে হোরকাসিটাসকে সাড়ে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচারক বলেন, “আপনারা (পেলকের পরিবার) হয়তো এমনটাই চেয়েছিলেন, তবে আপনারা ক্রিস্টোফারকে তাঁর হৃদয় থেকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
তবে, এআই প্রযুক্তির এই ব্যবহারের ফলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে আদালতে ‘ডিপফেক’ (Deepfake) বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা মিথ্যা প্রমাণ উপস্থাপন করার সম্ভবনা বাড়বে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই কারও কণ্ঠস্বর বা চেহারা নকল করা সম্ভব।
অ্যারিজোনার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যান টিমার জানান, সম্প্রতি এআইয়ের জনপ্রিয়তা এবং সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ায় আদালতগুলোতে এর ব্যবহার বিষয়ক ভালো চর্চাগুলো খুঁজে বের করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক গ্যারি মার্চেন্ট বলেন, “বিচার বিভাগ এবং আইনজীবীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে যে, ‘ডিপফেক’ প্রমাণ ক্রমশ ব্যবহৃত হবে।
এটি তৈরি করা সহজ এবং যে কেউ মোবাইল ফোনে এটি করতে পারে। এটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হতে পারে, কারণ বিচারক এবং জুরিরা আমাদের মতোই, যা দেখি, তা বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস