দারুচিনি: কিছু ওষুধের সঙ্গে এর মিথষ্ক্রিয়া? নতুন গবেষণা, সতর্কবার্তা
দারুচিনি, যা আমাদের দেশে মসলা হিসেবে খুবই পরিচিত, রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর ভেষজ গুণাগুণ অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত।
কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, অতিরিক্ত দারুচিনি সেবন, বিশেষ করে খাদ্য পরিপূরক (supplement) হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধের সঙ্গে এর পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. লিনা ওয়েন সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “ফুড কেমিস্ট্রি: মলিকিউলার সায়েন্সেস” জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে দারুচিনির প্রধান উপাদান সিনামালডিহাইড কিছু ওষুধের বিপাক ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, সিনামালডিহাইড শরীরে দ্রুত শোষিত হওয়ার পরে অন্য একটি উপাদানে পরিণত হয়, যা ওষুধের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে অথবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।
এই কারণে, গবেষকরা দারুচিনি-যুক্ত খাদ্য পরিপূরক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের।
ড. ওয়েন আরও জানান, দারুচিনির মধ্যে “কৌমেরিন” নামক একটি উপাদান থাকে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। বিশেষ করে “ক্যাসিয়া” জাতের দারুচিনিতে এর মাত্রা বেশি থাকে।
যদি কেউ রক্ত তরল করার ওষুধ (blood thinner) সেবন করেন এবং একইসঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি গ্রহণ করেন, তাহলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এছাড়াও, লিভারের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও দারুচিনির অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, অ্যাজমা, স্থূলতা, এইচআইভি/এইডস বা ডিপ্রেশন এর মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের দারুচিনি পরিপূরক ব্যবহারের আগে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
ড. ওয়েন এই তালিকার সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, যারা রক্ত তরল করার ওষুধ খান, লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, অথবা হলুদ, জিনসেং, এবং জিঙ্কগো বিলোবার মতো অন্য কোনো খাদ্য পরিপূরক গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তাহলে, যারা প্রতিদিন সকালে চায়ের সঙ্গে বা রান্নার মশলারূপে সামান্য দারুচিনি ব্যবহার করেন, তাদের কি কোনো দুশ্চিন্তা আছে? ড. ওয়েনের মতে, রান্নার সাধারণ পরিমাণে দারুচিনি ব্যবহার করলে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে, দীর্ঘদিন ধরে দারুচিনির ক্যাপসুল বা পরিপূরক গ্রহণ করা হলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, খাদ্য পরিপূরকগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় না এবং বাজারে আসার আগে সেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয় না।
তাই, কোনো পরিপূরক ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাটা জরুরি।
সবশেষে, ড. ওয়েন পরামর্শ দেন, কোনো খাদ্য পরিপূরক গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন, বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোনো ওষুধ সেবন করেন। কারণ, একটি প্রাকৃতিক উপাদানও বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			