নারীদের একাকী ভ্রমণ: বাড়ছে এক নতুন দিগন্ত!

এককভাবে, কিন্তু দলবদ্ধভাবে: নারীদের একাকী ভ্রমণের নতুন দিগন্ত।

বর্তমানে সারা বিশ্বে নারীদের একাকী ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে, তবে এক্ষেত্রে তারা প্রায়শই দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছেন। এর পেছনে রয়েছে নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা এবং বন্ধুত্বের মতো বিষয়গুলো।

ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শদাতা সংস্থা ভার্চুওসোর মতে, বর্তমানে এককভাবে ভ্রমণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নারী। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী হয় বিবাহবিচ্ছিন্না, নতুবা বিধবা। এর মূল কারণ হলো, একা ভ্রমণের মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে চান এবং একইসঙ্গে অন্য নারীদের সঙ্গে একটি সহযোগী সম্পর্ক তৈরি করতে চান।

এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা এখন শুধু ঘুরতে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না, বরং অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চান, একটি কমিউনিটি গড়তে চান। বিশেষ করে, অনেক নারী তাদের জীবনের নতুন একটি অধ্যায় শুরু করতে চান, যা তাদের মানসিক শান্তির পাশাপাশি আত্ম-অনুসন্ধানে সাহায্য করে।

এই চাহিদা মেটাতে বর্তমানে অনেক ভ্রমণ সংস্থা নারীদের জন্য বিশেষ ট্যুর আয়োজন করছে। ১৯৮২ সাল থেকে অ্যাডভেঞ্চারওমেন নামক একটি সংস্থা নারীদের জন্য বিশেষ ভ্রমণ পরিচালনা করে আসছে।

তারা ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নারী শেফ, ওয়াইন প্রস্তুতকারক এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ব্যাকরোডস-এর মতো সংস্থাগুলোও নারীদের জন্য আকর্ষণীয় ভ্রমণ প্যাকেজ তৈরি করছে।

তারা নেপাল এবং জাপানের মতো দূরবর্তী গন্তব্যে হাঁটা ও ট্রেকিংয়ের সুযোগ দিচ্ছে। ২০২৩ সালে তারা প্রথম এই ধরনের ট্যুর শুরু করে এবং ব্যাপক সাফল্যের পর ২০২৫ সালে তাদের কার্যক্রম আরও বাড়িয়েছে।

এছাড়াও, ইএফ গো অ্যাহেড ট্যুরস ২০২৬ সাল থেকে মিশর, আয়ারল্যান্ড, ইতালি এবং পেরুর মতো গন্তব্যের জন্য নারী-কেন্দ্রিক ট্যুর চালু করার পরিকল্পনা করছে।

তাদের মতে, ৬০ শতাংশ নারী ভ্রমণের মাধ্যমে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করতে চান। ক্রুজ লাইনগুলোও এই প্রবণতাকে স্বাগত জানাচ্ছে।

অরোরা এক্সপেডিশনস ২০২৩ সালে ৭২ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ‘সিলভিয়া আর্ল’ নামক একটি জাহাজে করে নারীদের জন্য আন্টার্কটিকা ভ্রমণের আয়োজন করতে চলেছে, যেখানে গাইড হিসেবে থাকবেন নারী কর্মীরাই।

এই ধরনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে জানান, তারা অন্যদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এই ধরনের ভ্রমণের মাধ্যমে তারা যেন এক জাদুকরী মুক্তি খুঁজে পান।

ক্যানাডিয়ান রকিজ-এ প্রথমবার অ্যাডভেঞ্চারওমেনের একটি ট্যুরে অংশ নেওয়া কেটি গ্যালাঘের বর্তমানে তানজানিয়ায় তার ১৪তম ভ্রমণে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই পরিবর্তনের ফলে নারীরা এখন দলবদ্ধভাবে ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে এবং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করছে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *