নিউ ইয়র্কের ব্যস্ততম কেন্দ্র, টাইমস স্কোয়ারে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে বারো ফুট উঁচু এক বিশাল ব্রোঞ্জ মূর্তি। “Grounded in the Stars” (গ্রহ-নক্ষত্রে প্রোথিত) নামের এই শিল্পকর্মটি তৈরি করেছেন ব্রিটিশ শিল্পী থমাস জে প্রাইস। এই মূর্তি স্থাপন নিছক কোনো শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর চেয়েও বেশি কিছু—যা আসলে পরিচিতি এবং উপস্থাপনার চিরাচরিত ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
টাইমস স্কোয়ারের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে, যেখানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আনাগোনা, সেখানে এই নারীর মূর্তিটি যেন এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করেছে। শিল্পী প্রাইস তাঁর এই কাজের মাধ্যমে দর্শকদের মনে গভীর চিন্তাভাবনার জন্ম দিতে চেয়েছেন। মূর্তিটির ভঙ্গি অনেকটা বিখ্যাত শিল্পী মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর “ডেভিড”-এর মতো, তবে পোশাক এবং সাজসজ্জায় রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
শিল্পীর ভাষ্যমতে, এই ধরনের পাবলিক আর্ট স্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানটির সঙ্গে মিশে যাওয়া, সেখানকার ঐতিহাসিক এবং ভৌত কাঠামোর অংশ হয়ে ওঠা। একইসঙ্গে, সেখানে আসা যাওয়া করা মানুষের সঙ্গেও একটি সম্পর্ক তৈরি করা। “Grounded in the Stars” মূর্তিটি আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত ব্রডওয়ে অ্যাভিনিউ এবং ৪৬তম স্ট্রিটের সংযোগস্থলে প্রদর্শিত হবে।
শিল্পী প্রাইসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো “Man Series”। এটি মূলত পুরুষের প্রতিকৃতি নিয়ে তৈরি করা একটি স্টপ-মোশন অ্যানিমেশন, যা মে মাস জুড়েই প্রতিদিন রাত ১১টা ৫৭ মিনিট থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত টাইমস স্কোয়ারের ৯৫টি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয়েছে। এই কাজটিও গভীর মানবিক অনুভূতি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই “Midnight Moment” প্রোগ্রামের আগে এখানে অ্যান্ডি ওয়ারহল এবং ইয়োকো ওনোর মতো শিল্পীদের কাজও প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রাইসের আশা, তাঁর এই দুটি কাজ—যা শ্বেতাঙ্গ নাট্যকার জর্জ এম. কোহান এবং যাজক ফ্রান্সিস পি. ডাফির মতো মূর্তির পাশে স্থাপন করা হয়েছে—মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। শিল্পী চান, তাঁর কাজ যেন মানুষের গভীর অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হতে এবং বৃহত্তর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সাহায্য করে।
“Grounded in the Stars”-এর ধারণা এসেছে লন্ডন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মানুষের প্রতি মনোযোগ এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। শিল্পী তাঁর “Resilience of Scale” শীর্ষক প্রদর্শনীতেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যা নিউ ইয়র্ক সিটির Hauser & Wirth গ্যালারিতে ১৪ জুন পর্যন্ত চলেছে। শিল্পী মনে করেন, যদি কোনো নারী বা অন্য কোনো ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে এমন বিশাল এবং মহিমান্বিত রূপে উপস্থাপন করা হয়, তবে তা মানুষের ভেতরের ধারণাগুলোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: পিপল