শিরীন আবু আকলেহর মৃত্যু: বাইডেন প্রশাসনের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস!

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে একটি তথ্যচিত্র। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাটি সম্ভবত ইচ্ছাকৃত ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন এর প্রমাণ সম্পর্কে অবগত ছিল।

২০২২ সালের ১১ই মে, পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে আল জাজিরার হয়ে সংবাদ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত হন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শিরিন আবু আকলেহ। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর, “হু কিলড শিরিন?” (Shireen-কে খুন করেছে?) শীর্ষক ৪০ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানি জেটিও।

তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, আবু আকলেহর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্ন। জানা যায়, ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে একটি “স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত”-এর আহ্বান জানালেও, ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। হত্যাকারীর বিচারের দাবি থেকে সরে এসে তারা এটিকে “tragic circumstances” বা “tragic accident” হিসেবে উল্লেখ করে। এমনকি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ওপর থেকে তাদের নজরদারিও শিথিল করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা তথ্যচিত্রে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের হাতে আসা প্রমাণে ইঙ্গিত ছিল যে, আবু আকলেহর হত্যাকাণ্ডটি “ইচ্ছাকৃত”। ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিনের দৃশ্য এবং ইসরায়েলি স্নাইপার ও সাংবাদিকদের মধ্যেকার দূরত্ব বিচার করে এমন ধারণা করা হয়েছিল।

আরেকজন সাংবাদিক, আলী আল-সামৌদিও একই সময়ে আহত হয়েছিলেন। তার মতে, হামলাকারীরা যে সাংবাদিক অথবা কোনো বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত ছিল।

তথ্যচিত্রে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সম্পর্কের কারণে এমনটা হয়েছে। প্রশাসনের কেউ ইসরায়েল সরকারকে চটাতে রাজি ছিল না, বিশেষ করে যখন একজন মার্কিন নাগরিককে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অভিযোগ ওঠে।

২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অ্যান্ড্রু মিলার জানান, ইসরায়েল সরকারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এমনকি আবু আকলেহকে কে গুলি করেছে, সেই বিষয়ে জানতেও ইসরায়েলি সরকার কোনো সাহায্য করেনি।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে ক্রসফায়ারে পড়ে আবু আকলেহর মৃত্যু হয়েছে। তবে মিলার জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের কাছে ঘটনার শুরু থেকেই এমন তথ্য ছিল যা ইসরায়েলের দাবির সঙ্গে মেলে না।

মার্কিন সরকার আজও পর্যন্ত আবু আকলেহ হত্যা সংক্রান্ত কোনো সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। অধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম স্বাধীনতা বিষয়ক সংস্থা এবং আইনপ্রণেতারা বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে আসছেন। তাদের মতে, স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং এই ঘটনায় জড়িত ইসরায়েলি সামরিক ইউনিটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করা উচিত।

ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাও (ডন)-এর অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর রায়েদ জারার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধেই নয়, আমেরিকানদের বিরুদ্ধেও ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।”

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *