আমেজানে রাস্তা! সমালোচনার ঝড়, জলবায়ু সম্মেলনে প্রভাব?

শিরোনাম: আমাজন: জলবায়ু সম্মেলনের আগে ব্রাজিলে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক

নভেম্বরে ব্রাজিলের আমাজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন, ‘কপ-৩০’। আর এই সম্মেলনের প্রাক্কালে, দেশটির একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পরিবেশগত উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই রাস্তাটি তৈরি হলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যখন বিশ্ব নেতারা একত্রিত হবেন, তখন এমন একটি প্রকল্প বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

**রাস্তা নির্মাণ: উদ্বেগের কারণ**

প্যারা রাজ্যের সরকার প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক তৈরি করছে, যা একটি প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং যানজট কমাতে সাহায্য করবে। তবে, এই সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, এই রাস্তাটি আমাজনের কাছাকাছি বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে যাবে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, এর ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হবে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে।

আগে থেকেই আলোচনা ছিল যে, বেলেন শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বেলেন শহরটি প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের আবাসস্থল এবং এটি আমাজনের কাছাকাছি অবস্থিত। যদিও এই শহরটি সম্মেলনের জন্য নির্বাচিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাস্তাটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তবুও সমালোচকরা বলছেন, জলবায়ু সম্মেলনের আগে এমন একটি পদক্ষেপ পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে দেয়।

**জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাজনের গুরুত্ব**

আমাজন বন জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা da সিলভা, যিনি বনভূমি ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন, এই সম্মেলনে আমাজন রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান। তিনি এর আগে বলেছিলেন, “আমরা ইতিহাসে সেরা কপ আয়োজন করতে যাচ্ছি, কারণ অন্যান্য দেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আমাজন ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। আর এই সম্মেলনটি হবে খোদ আমাজনে।”

**প্রকল্পের বিস্তারিত এবং বিতর্ক**

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সড়কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লিবারdade’ বা স্বাধীনতা অ্যাভিনিউ। এই অ্যাভিনিউ নির্মাণের ফলে আশেপাশে কোনো উন্নয়নের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে ব্রাজিলের শহরগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে অনেক প্রাকৃতিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আবাসনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ হয়েছে, যা পরে বৈধতা পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই সড়কের পাশেও অবৈধ নির্মাণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই প্রকল্পটি ২০২০ সাল থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছিল এবং ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সমালোচনার মুখেও নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কপ-৩০’-এর জন্যই এই অ্যাভিনিউ তৈরি করা হচ্ছে। যদিও ব্রাজিল সরকার বলছে, কপ-৩০ এর জন্য পরিকল্পনা করা ৩৩টি অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে এই অ্যাভিনিউ অন্তর্ভুক্ত নয়।

বেলেনের গভর্নর হেলডার বারবালহো, যিনি প্রেসিডেন্ট লুলার মিত্র, তিনিও এই প্রকল্পের পক্ষে। সড়কটি আগামী ১০ নভেম্বর, সম্মেলনের ঠিক আগে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *