বোনের মৃত্যুর সাক্ষী: ভয়াবহ অত্যাচারের স্মৃতি নিয়ে ক্ষতিপূরণ!

আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এক ভয়াবহ ঘটনায়, দত্তক নেওয়া এক কিশোরীর অনাহারে মৃত্যুর ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services – DHS)-এর গাফিলতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।

খবর অনুযায়ী, সাবরিনা রে নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে তার পালক পিতামাতা চরম নির্যাতন করে এবং অনাহারে রেখেছিল, যার ফলস্বরূপ ২০১৭ সালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় সাবরিনার ওজন ছিল মাত্র ৫৬ পাউন্ড।

এই ঘটনার জেরে, সাবরিনার এক ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে রাজি হয়েছে ডিএইচএস। কর্তৃপক্ষের মতে, এই শিশুটিও সাবরিনার সঙ্গে একই বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, যা তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত সাবরিনার পরিবারের প্রতি রাজ্যের দায়বদ্ধতারই অংশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবরিনার পালক পিতামাতা মার্ক রে এবং মিস্তি জো বুসমান-রে তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ২৩ জন শিশুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং ‘রেজ অফ সানশাইন’ নামে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার চালাতেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, তারা শিশুদের প্রতি চরম অবহেলা ও নির্যাতন করতেন।

ঘটনার দিন, যখন সাবরিনার মৃতদেহ পাওয়া যায়, তখন মার্ক ও মিস্তি তাদের পালক ছেলেদের নিয়ে ডিজনি ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

পুলিশ অফিসার জোশ সিয়েনকিউইজ এই দৃশ্যকে তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সাবরিনার মা, মিস্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং বাবা মার্ককে ৮০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় সাবরিনার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যও জড়িত ছিলেন এবং তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে আরও উঠে আসে, ডিএইচএস-এর কর্মীরা শিশুদের প্রতি হওয়া নির্যাতনের অনেক অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের দুর্বল তদারকির কারণে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।

এমনকি, ডিএইচএস-এর কিছু কর্মীর সঙ্গে রে দম্পতির যোগসাজশ ছিল বলেও শোনা যায়।

এই ঘটনার আগে, সাবরিনার আরও দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি মার্কিন ডলার দিতে রাজি হয়েছিল ডিএইচএস। এছাড়াও, রে দম্পতির ডে-কেয়ার সেন্টারে আসা ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে নির্যাতনের শিকার হওয়ার জন্য ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী স্কট ওয়াডিং, যিনি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের পক্ষে মামলা লড়ছেন, তিনি বলেছেন, এই ক্ষতিপূরণগুলি শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি ছোট পদক্ষেপ। তিনি আরও জানান, ডিএইচএসকে এখন কর্মীদের পুষ্টিহীনতা ও নির্যাতনের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

বর্তমানে, রে দম্পতির বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা চলছে। এর মধ্যে, দুটি শিশু একটি থেরাপি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, যেখানে তাদের অভিযোগগুলো শোনা হয়নি।

এই ধরনের ঘটনা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার সামনে নিয়ে আসে। বাংলাদেশেও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে এবং সরকার শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *