ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়, নতুন পোপ কীভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সম্প্রতি পোপ নির্বাচিত হয়েছেন লিও চতুর্দশ।
তাঁর নেতৃত্বকালে, বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ+ (লেসবিয়ান, গে, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং কুইয়ার পরিচয়ভুক্ত মানুষ)-দের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
নতুন পোপের নির্বাচন প্রসঙ্গে আমেরিকান ধর্মযাজক রেভারেন্ড মিশেল ফ্যালকোনের মতে, পোপ লিও চতুর্দশ “একটি সম্মানজনক মধ্যপন্থা” অবলম্বন করবেন।
এর মাধ্যমে তিনি গির্জার মধ্যে প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল—উভয় ধরনের মতাদর্শের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারেন।
পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর মিল রয়েছে। তিনি দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং বিভিন্ন পটভূমির মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন।
জানা যায়, নতুন পোপের জন্ম আমেরিকায়। তিনি পেরুতে ২০ বছর কাটিয়েছেন এবং চিকলাইয়োর আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি বিশপ বিষয়ক ডিক্যাস্টেরির প্রিফেক্ট ছিলেন, যেখানে তিনি বিশ্বজুড়ে বিশপ নিয়োগের বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিসকে পরামর্শ দিয়েছেন।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে নতুন পোপ ঐক্যের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের সকলের উচিত মিশনারি চার্চ, অর্থাৎ, এমন একটি চার্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করা, যা সেতু তৈরি করে এবং সংলাপ স্থাপন করে।”
তাঁর কথায়, সকলের প্রতি সহানুভূতি, উপস্থিতি, আলোচনা ও ভালোবাসার প্রয়োজন।
তবে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর আগের কিছু মন্তব্য সেভাবে গ্রহণীয় ছিল না।
২০১২ সালে তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং সমাজে এমন কিছু বিশ্বাস ও রীতিনীতিকে সমর্থন করা হয়, যা সুসমাচারের পরিপন্থী।
বিশেষ করে, “সমকামী জীবনযাত্রা” এবং “একই লিঙ্গের সঙ্গী ও তাদের দত্তক নেওয়া শিশুদের নিয়ে গঠিত পরিবার”-এর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
চিকলাইয়োতে থাকাকালীন পেরুর সরকার যখন স্কুলগুলোতে লিঙ্গ সম্পর্কিত বিষয় পড়ানোর পরিকল্পনা করে, তখন তিনি এর বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেছিলেন, “লিঙ্গ বিষয়ক ভাবাদর্শের প্রসার বিভ্রান্তিকর, কারণ এটি এমন লিঙ্গ তৈরি করতে চায়, যা আসলে নেই।”
পোপ লিও চতুর্দশের দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তাঁর পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসকে সাধারণত আরও প্রগতিশীল হিসেবে দেখা হতো।
২০১৩ সালে তিনি যখন এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “আমি কে, যে বিচার করব?”, তখন তা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল।
এক দশক পরে, পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা করেন যে এলজিবিটিকিউ+ দম্পতিদের আশীর্বাদ করা যেতে পারে।
যদিও বিবাহ সম্পর্কে চার্চের আগের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এছাড়া, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের বাপ্তিস্ম দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভ্যাটিকান সম্মতি দেয়, যতক্ষণ না এর ফলে “প্রকাশ্যে কেলেঙ্কারি বা বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভ্রান্তি” সৃষ্টি হয়।
পোপ ফ্রান্সিস নিজেও এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী কিছু মন্তব্য করেছিলেন এবং এপ্রিল ২০২৪-এ ভ্যাটিকান কর্তৃক প্রকাশিত একটি নথিতে সম্মতি দেন, যেখানে রূপান্তরকামী অস্ত্রোপচার এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের ধারণাকে মানুষের মর্যাদার পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পোপ লিও চতুর্দশের কিছু বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি এখনো অজানা থাকলেও, অন্যদের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সমালোচনা করে দুটি নিবন্ধ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন।
এর মধ্যে একটি নিবন্ধে ভ্যান্সের সেই উক্তির বিরোধিতা করা হয়, যেখানে তিনি খ্রিস্টানদের অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলেন।
অন্যটিতে, প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের ‘অর্ডো অ্যামোরিস’ (ক্যাথলিক ধর্মীয় ধারণা অনুসারে, ভালোবাসার একটি সুবিন্যস্ত ক্রম)-এর ধারণা ব্যবহার করে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করা হয়।
পোপের নির্বাচন প্রসঙ্গে ফাদার জেমস মার্টিন বলেন, “আমি পোপ লিও চতুর্দশকে একজন দয়ালু, খোলা মনের, বিনয়ী, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, পরিশ্রমী, সরল ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে জানি।”
এলজিবিটিকিউ+ অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন, ‘গ্লাড’-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও সারা কেট এলিস বলেছেন, তাঁরা নতুন পোপের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
তিনি আরও যোগ করেন, “পোপ লিও চতুর্দশের নেতৃত্বে, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি, সম্মান ও ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এক অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তাঁর মতে, পোপ এমন একটি চার্চ তৈরি করতে পারেন, যা সকলের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা ও ভালোবাসার বার্তা দেয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।